বাসের ডিকিতে আলু পাচারের চেষ্টা কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র।
এ বার আলু পাচার! বাসের ডিকিতে লুকিয়ে ভিন্ রাজ্যে আলু পাচার করার অভিযোগ উঠল কোচবিহারে। শুক্রবার অসমে পাচারের সময়ে পুলিশের হাতে তা ধরা পড়েছে। পুলিশের দাবি, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা। জেলার পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, অসম নম্বরের একটি বাসের ডিকিতে এবং ছাদে ষাট থেকে সত্তর ব্যাগ আলু নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বক্সিরহাটে অসম সীমানায় ওই বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে আলুর বস্তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই বাসে এক জন যাত্রীও ছিলেন। তল্লাশির সুযোগে তিনি পালিয়ে যান।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ভিন্ রাজ্যে আলু রফতানি আটকাতে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে অসম সীমানায়। গলিপথেও আলু পাচারের চেষ্টা হচ্ছে। দু’দিন আগে অসম সীমানার মানসাই এলাকায় আলু বোঝাই একটি ট্রাক আটক করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে ট্রাকটি থানায় নিয়ে যায়।
আনাজ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অসমে আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকেও প্রতিদিন আলু অসমে পাঠানো হয়। অসমে পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজি প্ৰতি ৩২ টাকা। খুচরো বাজারে তা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে আলু পাঠাতে পারলে, বড় অঙ্কের লাভের মুখ দেখেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের একাধিক বাজারে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায়, এ বার কড়া অবস্থান নেয় রাজ্য সরকার। কোচবিহার থেকে শুরু করে মালদহ বা কলকাতা পর্যন্ত একাধিক বাজারে আলুর দাম কেজি প্ৰতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পৌঁছে যায়। রাজ্য সরকার স্থানীয় বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। তাতে কেজি প্ৰতি আলুর দাম কোথাও দু’টাকা, কোথাও তিন টাকা কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে কৃষক থেকে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ থাকলে তাঁরা লোকসানের মুখে পড়বেন। কোচবিহারে এই দাবিতে দফায়-দফায় পথ অবরোধ ও মিছিলও করেছেন কৃষকেরা। আলু ব্যবসায়ী সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদক গোপাল সাহা বলেন, ‘‘চোরাপথে কারা আলু পাঠাচ্ছে, বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ায় বড় লোকসানের মধ্যে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।’’
এ দিন আলিপুরদুয়ারেও আন্দোলনে নামেন কৃষকেরা। তাঁদের অভিযোগ, বেশ কয়েক দিন ধরে আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠাতে গেলে ব্যবসায়ীদের গাড়ি আটকে রেখে হেনস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, সারের কালোবাজারি হওয়ার ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে ‘ডুয়ার্সকন্যা’র সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি জেলাশাসকে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। কৃষকদের দাবি দ্রুত, সমস্যার সমাধান না হলে, বৃহত্তর আন্দোলন হবে।