খাঁ খাঁ: রাস্তা ফাঁকা। নিজস্ব চিত্র
বছরের প্রথম বলয় গ্রাস সূর্যগ্রহণ ছিল ২১ জুন, রবিবার। এ দিন ছিল উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন। আবার বিশ্ব যোগ দিবসও ছিল এ দিনই। রবিবার শিলিগুড়ি শহরে গ্রহণের সময় রান্না না করার প্রবণতা যেমন দেখা গেল তেমনই বিভিন্ন সংগঠনের তরফে গ্রহণ দেখার আয়োজনেও দেখা গেল অনেককেই। তবে সব মিলিয়ে এ দিন রাস্তায় লোক ছিল একেবারেই কম। লকডাউনের কড়াকড়ির সময়ে পুলিশের তাড়া খেয়েও যেখানে শহরের রাস্তায়-অলিগলিতে লোক দেখা গিয়েছে। সেখানে রবিবার সূর্যগ্রহণের একেবারে খাঁ খাঁ করেছে শহরের রাস্তাঘাট।
সকাল থেকে গ্রহণ চলেছে মোটামুটি দুপুর সওয়া দু’টো পর্যন্ত। সেই সময়টা অনেক বাড়িতেই রান্না হয়নি। এ দিন শহরের অনেকের বাড়িতেই দুপুর সওয়া দু’টোর পরে রান্না চাপতে দেখা যায়। গ্রহণ চলার সময় রাস্তায় লোকজনের চলাচল অন্যদিনের তুলনায় অনেকটা কমে গিয়েছিল। রবিবার সাধারণত বেলা ১২টার পরেও বাজার গমগম করে। এ দিন সকালে আনাজবাজারগুলিতে ভিড় থাকলেও সকাল দশটার পর থেকেই হালকা হতে শুরু করে। বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতা তথা দলের রাজ্য সম্পাদক রথীন বসু বলেন, ‘‘বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা সংস্কারের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। তাই গ্রহণের সময় রান্না না করা বা বাড়ি থেকে বের না হওয়ার মত সংস্কার আমরা মেনে চলি।’’
যদিও এমনটা মনে করেন না শহরের একটি বড় অংশ। বিভিন্ন বিজ্ঞান অনুরাগী সংগঠনের তরফে এ দিন শহর ও লাগোয়া এলাকায় সূর্যগ্রহণ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে অনেক উৎসুক বাসিন্দা, পড়ুয়া হাজির ছিলেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই এনার্জি ও কসমিক রে গবেষণাকেন্দ্রের গবেষক অরুণাভ ভদ্র জানান, এ দিন শহরের রাস্তায় বেরিয়ে তাঁরও বেশ অদ্ভুত লেগেছে লোকজনের চলাচল কম দেখে। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রহণের সঙ্গে জীবাণু বেড়ে যাওয়া, করোনার প্রভাবের কোনও সম্পর্কই নেই। গ্রহণের সময় অন্য কোনও মহাজাগতিক রশ্মি এসে পড়ারও কোনওরকম সম্ভাবনা থাকে না।’’
এ দিন ডাবগ্রামে হাইড্রোজেন আলফা টেলিস্কোপ ও আরও চারটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষকে গ্রহণ দেখার সুযোগ করে দেয় স্কাইওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশন নর্থ বেঙ্গল। সংস্থার সম্পাদক দেবশিস সরকার বলেন, ‘‘থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে দেখে, জীবাণুমুক্তকরণ করে সামাজিক দূরত্ব মেনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ দিন গ্রহণের সময় খাওয়ার জন্য আমরা সকলকে একটি করে চকলেটও দিয়েছিলাম।’’ একইভাবে শহর ও শহর লাগোয়া এলাকার কুড়িটি জায়গায় সোলার চশমা দিয়ে গ্রহণ দেখার ব্যবস্থা করে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের দার্জিলিং জেলা সহ-সভাপতি প্রবীর পান্ডা বলেন, ‘‘কুসংস্কার বজায় রেখে সমাজের একটি অংশ মানুষের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। আমাদের লড়াই তার বিরুদ্ধে।’’
এ দিন শিলিগুড়ি শহরে সঙ্ঘ পরিবারের তরফে ঘরে বসে যোগদিবস পালন করা হয়। অংশ নেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাও।