n অস্বস্তি: প্রবল গরম। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বারান্দায় রোগীর ভরসা হাতপাখার হাওয়া। (নীচে) শিলিগুড়ি শহরের তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রি। নিজস্ব চিত্র
ভরা শ্রাবণ মাসে গরম আর ঘামে হাঁসফাঁস দশা শহরবাসীর। ভাদ্র এলে যে কী হবে, তা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না অনেকে। অথচ কিছু দিন আগেও টানা বৃষ্টিতে ভিজেছিল শিলিগুড়ি। সময়টা বদলেছে গত কয়েক দিন ধরে। পারদ ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘুরছে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর গত কয়েক দিনের যাবতীয় উত্তাপকে ছাপিয়ে গেল। দুপুর সাড়ে বারোটায় তাপমাত্রা দাঁড়াল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়ার বিভিন্ন অ্যাপে ‘রিয়েল ফিল’ প্রকৃত অনুভূতির হিসেবে যা প্রায় ৪৭ ডিগ্রির মত। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছে, মেঘ, বৃষ্টি সব এখন দক্ষিণগামী। ওড়িশা উপকূলে ঘুরছে মেঘ। চলছে বৃষ্টিও। আর শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিরাট অংশের মেঘমুক্ত আকাশের মাথায় সূর্য যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তাতেই বাড়ছে গরম। আগামী সাত দিন ভোগান্তি চলবে বলে তারা মনে করছেন। যদিও সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শিলিগুড়িতে এক পশলা বৃষ্টি হয়। এতে অসহ্য গরম খানিকটা কমলেও পরিস্থিতি প্রায় একই রয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, বর্ষা শুরু হওয়ার পর জুলাই মাসে হিমালয়ের পাদদেশ জুড়ে নিম্নচাপ অক্ষরেখা রেকর্ড সময় ধরে অবস্থা করেছিল। তাতে দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে টানা ১০ দিন বৃষ্টি হয়। গত ১৫ বছরের হিসেবে যা রেকর্ড। কিন্তু জুলাই মাসের শেষ থেকে পরিস্থিতি বদল হতে শুরু হবে। বঙ্গোপসাগরের উপর নিম্নচাপের জন্য মেঘ, ঘূর্ণাবর্ত ওড়িশা উপকূল থেকে দক্ষিণবঙ্গ অবধি বিস্তৃত হয়েছে। তাতে ওই অঞ্চলে বৃষ্টি হলেও উত্তরবঙ্গের আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আর এতেই সূর্যের তাপে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গরম।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘আপাতত দিন সাতেক এই অবস্থা চলবে বলেই মনে হচ্ছে। কোনও কোনও সময় হঠাৎ করে বাজ পড়বে বা এক-দুই পশলা বৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি বদলাতে কিছুটা সময় লাগবে।’’
এ দিন ভোর ৫টা থেকেই রোদ। বেলা যত বাড়তে থাকে, ততই বাড়তে থাকে উত্তাপ। লু’য়ের মতো গরম বাতাসে বাসিন্দাদের মুখ, চোখে জ্বালা শুরু হয়। বেলা বাড়তে থাকলে অবশ্য ঘামও বাড়ে।
আবহাওয়াবিদেরা জানান, শ্রাবণ মাস, বর্ষাকালের এই মরসুমে বাতাসে আবার কিছুটা জলীয় বাস্প মাঝেমধ্যে তৈরি হয়। তাতে গরমের সঙ্গে ঘাম বাড়ে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পারদ ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলে। স্কুলের কলেজের কচিকাঁচা থেকে প্রবীণ নাগরিকেরা বিপাকে পড়েন। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। লোকাল বাস, অটো, টোটো যাত্রী কম ছিল। কাজকর্ম না থাকলে অনেকেই বাড়ি থেকে বার হননি। বিকেল অবধি গরমের জেরে ডাবের দোকান, ঠান্ডা পানীয়ের দোকান ভিড় ছিল। অনেক বাসিন্দাকেই রাস্তায় ঠান্ডা জল কিনে চোখ মুখ ধুতে দেখা যায়। স্কুটি এবং মোটরবাইক আরোহীরা মুখ ঢেকে ঘুরতে থাকেন। সন্ধ্যায় বাজারঘাটে কিছু লোক আসা যাওয়া বাড়ে। এক পশলার বৃষ্টিতে রাতের পরিস্থিতি বদল হওয়ার কথা অনেকে ভাবলেও বেশি রাত অবধি গরম ভালই রয়েছে শহরে।