উত্তরবঙ্গে সফরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে একটি ‘বিজ়নেস সামিট’ হতে পারে দার্জিলিং পাহাড়ে। সব ঠিক থাকলে আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে পৌঁছনোর কথা মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশাসন সূত্রে খবর, দিন তিনেক পাহাড়ে থাকতে পারেন তিনি। সূত্রের খবর, এই সময়ের মধ্যে দার্জিলিঙে ‘বিজনেস সামিট’ করার কথা ভাবা হয়েছে এবং রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের তরফে তার ব্যবস্থা করার কথা। সে মতো উত্তরবঙ্গের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এলাকার শিল্পোদ্যোগীদের ডাকা হতে পারে পাহাড়ে। ভানু ভবনে আগামী বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই বাণিজ্য সম্মেলন হতে পারে। একটি বণিক সংগঠনের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা দার্জিলিং পাহাড় ও সমতলে শিল্পোদ্যোগীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চান। সূত্রের খবর, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আসতে পারেন।
আপাতত স্থির হয়েছে, মঙ্গলবার পাহাড়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নিয়ে ‘রোড শো’ করা হবে, যেখানে স্থানীয় বাণিজ্যের প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে। সে দিন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীরও পাহাড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে সে আয়োজনে যোগ দিতে। সেখানে উত্তরবঙ্গের লগ্নিকারীরা থাকবেন। প্রায় এক বছর পাহাড়ে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে পাহাড়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনও হয়েছে। রাজনৈতিক কারণেও মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে এই মুহূর্তে নানা স্তরের মতানৈক্য। বিশেষ করে, হামরো পার্টির হাত থেকে দার্জিলিং পুরসভা হাতছাড়া হওয়াকে কেন্দ্র করে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার বিরোধীরা এক জোট হন। দিল্লিতে বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে ‘কনভেনশন’ হয় এবং তাতে হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ড যোগ দেন। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন বিনয় তামাংও। সেই থেকে অজয় ‘পাহাড়ে গণতন্ত্র নেই’ বলে সরব হয়েছেন। ‘গণতন্ত্র বাঁচাও মঞ্চ’ গড়ে অজয় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তাতে শামিল বিনয় তামাংও। আবার, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিমল ও অজয় আলোচনা করেন। সেখানে বিনয়কে ডাকা না হলে তাঁদের থেকে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয় বিনয়ের।
অনীত থাপা তথা তাঁর দল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরে তাঁর সঙ্গে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপার আলোচনা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত বছরের শেষে, তৃণমূল থেকে সরে এসেছেন বিনয় তামাং। পাহাড়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে খোঁজখবর নিতে সম্প্রতি দিল্লি যান জিটিএ সদস্য বিনয়। পাহাড়-সমস্যা মেটানোর দাবিতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সনিয়া গান্ধীকে চিঠিও দিয়েছেন। এখন তিনি পাহাড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিনয় বলেন, ‘‘যেচে দেখা করার ব্যাপার নেই। মুখ্যমন্ত্রী যদি কথা বলতে চান, যেতে পারি। ফেরার পথে শুনলাম, পাহাড়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ শিল্প সম্মেলন নিয়ে আশাবাদী নন বিনয় তামাং। তিনি বলেন, ‘‘আগেও হয়েছে। লাভ হয়নি।’’
দিল্লি থেকে সোমবার-মঙ্গলবার ফেরার কথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আসছেন বলে শুনেছি। দেখা করার বিষয়ে কিছু ভাবিনি। পাহাড়ে ফিরে ভাবব।’’
হামরো পার্টির একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তারাও মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে বিশেষ উৎসাহী নয়।