বঞ্চিত: বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতে সিদ্দিকা। নিজস্ব চিত্র।
তাঁকে নিয়ে এক সময় এ রাজ্যে হইচইয়ের সীমা ছিল না। বছর আটেক আগেও গ্রামের রাস্তার ধুলো উড়িয়ে শাসক এবং বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের সহায়তার প্রতিযোগিতা বাড়ি অবধি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সে সব শুধু অতীতের স্মৃতি।
২০১৩ সালে দেশের একমাত্র ‘অতিকায়’ মহিলা হিসেবে ‘গিনেস বুকে’ স্বীকৃতি পাওয়া দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের অসুস্থ সিদ্দিকা পারভিনের অন্তরালের জীবন সংগ্রামের পাশে এখন আর কেউ নেই। ৮ ফিটের বেশি উচ্চতা নিয়ে কী ভাবে অতিকায় (ওজন এক কুইন্টালের বেশি) চলশক্তিহীন, প্রায় অথর্ব তরুণীটির দিন কাটছে তার খোঁজও রাখেন না কেউ।
এখনও পর্যন্ত জোটেনি দিন গুজরানের কোনও সরকারি ভাতা। হয়নি আধার কার্ড। সিদ্দিকা তো বটেই পরিবারও এ ব্যাপারে ক্ষুদ্ধ। অবহেলা অপমানের হাত থেকেও এখন নিস্তার নেই বিরল রোগে আক্রান্ত মেয়েটির।
পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমারের সমস্যায় ২৩ বছর বয়স থেকে সিদ্দিকার চেহারা দীর্ঘ হতে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাঁর খাবারের চাহিদা। রোজ প্রায় দু’কেজি চালের ভাত খাওয়ার চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয় গরিব পরিবারটিকে। সিদ্দিকা এরপর ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এক সময় নেতা, মন্ত্রীর সুপারিশে দলীয় কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে সিদ্দিকা চিকিৎসা করতে ট্রেনে কলকাতার পিজি থেকে দিল্লির এমস্ এ পাড়ি দিয়েছিলেন। তারপর কলকাতা ও দিল্লি থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে সেই যে বাড়িতে সকলে নামিয়ে দিয়ে গেলেন, আর কেউ খোঁজ রাখেননি বলে অভিযোগ। শুক্রবার বংশীহারির বিডিও সুদেষ্ণা পাল বলেন, “সিদ্দিকার জন্য কি করা যায় দেখছি।”
ক্ষোভে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছেন সিদ্দিকা। সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না। তেত্রিশ পেরনো সিদ্দিকাকে নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে দিনমজুর বাবা আফাজুদ্দিন ও মা মানসুরাবিবির। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ভারতের অতিকায় মেয়ের সম্মানটুকু ছাড়া সরকার তাদের মেয়ের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন না। এবার অন্তত একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দিন। ভবিষ্যতে যাতে সিদ্দিকার কিছুটা হলেও নিশ্চিত সংস্থান থাকে।’’