জলমগ্ন ভূতনিতে নেমেছে নৌকা। —নিজস্ব চিত্র।
ভেঙে গিয়েছে গঙ্গার রিং বাঁধ (চর ঘিরে গোলাকৃতি বাঁধ)। তাতেই বিপত্তি। নদীর জল প্রবেশ করেছে মালদার মানিকচকের ভূতনির চরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। কোথাও কোমর সমান, কোথাও আবার বুক সমান জল। ভূতনি থানার একতলার ঘরগুলি অর্ধেক জলের তলায়। তার মধ্যেই নৌকায় করে টহলদারিতে বার হচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উত্তর চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের কাছে একটি ঘরকে অস্থায়ী থানা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একই ছবি এলাকার বেশ কিছু স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। ভূতনির উত্তর চণ্ডীপুর বি পি হাই স্কুলের হালও প্রায় থানার মতোই। জলমগ্ন এই অবস্থা চলছে প্রায় দিন ২০ ধরে। সমস্যায় পড়েছেন এলাকাবাসীরা। এরই মধ্যে উঠছে ত্রাণ সামগ্রী লুঠের অভিযোগ। তা নিয়ে রাজনীতির চাপানউতরও শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধীর। এই আবহের মাঝেই শনিবার নৌকায় চেপে ভূতনির জলমগ্ন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন মালদার জেলাশাসক নিতিন সিংঘানিয়া।
মালদার এই এলাকায় গঙ্গার মূল বাঁধ ভেঙেছিল বছর দুয়েক আগেই। এর পর সেচ দফতর থেকে একটি অস্থায়ী রিং বাঁধ বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১১ অগস্ট সেটিও ভেঙে যায়। তার পর থেকেই জল প্রবেশ করতে শুরু করেছিল ভূতনিতে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত। উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অবস্থা সবথেকে খারাপ, গোটা গ্রাম দৃশ্যত জলমগ্ন। দক্ষিণ চণ্ডিপুর ও হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেরও বেশিরভাগ এলাকাই জলের তলায়। মালদা জেলা প্রশাসনের তরফে ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জলমগ্ন এলাকার মানুষজনের থাকার জন্য। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের উপর।
জলমগ্ন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জমেছে এলাকাবাসীদের একাংশের মনেও। তাঁদের অভিযোগ, বর্ষাকালে বাঁধ মেরামতির কাজ করার ফলে যে টাকা ব্যয় হচ্ছে, তার প্রায় সবই জলে যাচ্ছে। বাঁধ মেরামতির এই কাজ যদি বর্ষার আগে করা হত, তবে ভূতনি এ ভাবে জলমগ্ন হত না বলেই মত তাঁদের। এরই মধ্যে উঠে আসছে ত্রাণ সামগ্রী লুঠের অভিযোগ। বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক গৌড়চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “এটি ম্যানমেড বন্যা।” তাঁর অভিযোগ, প্রশাসন পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ দিচ্ছে বটে, কিন্তু সেই ত্রাণ লুঠপাট করে নিচ্ছেন তৃণমূলের লোকেরা।
একই অভিযোগ জেলার সিপিএম নেতা দেবজ্যোতি সিংহের গলাতেও। ব্লক ও জেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠাচ্ছে সে কথা মানছেন তিনিও। তবে দেবজ্যোতি বলেন, “ভূতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি বিজেপির দখলে এবং একটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। ত্রাণ নিয়ে দলবাজি করছেন তাঁরা। লুঠপাট হয়ে যাচ্ছে ত্রাণ। প্রশাসনের এই বিষয়ে দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।” যদিও ত্রাণ নিয়ে দলের ‘স্বজনপোষণের’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে এবং আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ত্রাণ বণ্টনের ব্যবস্থা করেছি। কোথাও ত্রাণ নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।”
শনিবার জলমগ্ন ভূতনির পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলাশাসক। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁর অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। জেলাশাসক আশ্বস্ত করেছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুলহার নদীর জলও কমতে শুরু করেছে। ভূতনির জলকে পাম্পের মাধ্যমে নদীতে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার জলের তলায় চলে গিয়েছে। ফলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জায়গাতেই বিকল্প হিসাবে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।