ছবি: সংগৃহীত
গত বছরই পুজো করেছিলেন এক মহিলা। অনেকের কিন্তু কিন্তু ভাব ছিল। কিন্তু জলপাইগুড়ি বিবেকানন্দ স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই ‘বাধা’কে আমল দেননি। এ বারেও তাঁরা ঠিক করেছেন, পুরোহিত যখন পুজো করবেন, স্কুলের অন্য শিক্ষিকারা যোগ দেবেন। মন্ত্রোচ্চারণও করবেন একসঙ্গে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আলো সরকার বলেন, “পুজোয় তো সকলের অধিকার রয়েছে। সকলের বাড়িতেই তো ঠাকুরঘর রয়েছে, সেখানে পুজোও হয়। তা হলে স্কুলে হবে না কেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ মিলে পুজোয় বসব। আমরাই তো নতুন প্রজন্মকে বিভাজন, গোঁড়ামিকে প্রশ্ন করতে শেখাব, তাই এই সিদ্ধান্ত।”
শুধু ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ নয়, জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বেরুবাড়ির এই স্কুলে সরস্বতী পুজোর দিন জাত-ধর্ম নির্বিশেষে জড়ো হয় পড়ুয়ারা। তখন আর পরভিন, রফিকদের সঙ্গে পার্থক্য থাকে না কৃষ্ণা, অভিজ্ঞানদের। এই দিনে সকলের একটাই প্রার্থনা, পরীক্ষায় যেন ভাল নম্বর পাই! শিক্ষিকা সুমনা ঘোষদস্তিদারের কথায়, “এটাই আমাদের দেশের সংস্কৃতি। ছোট থেকে এ ভাবে একসঙ্গে থাকতেই শিখেছি।”
গত বছর শিক্ষিকা জয়া চক্রবর্তী পুজো করেছিলেন। এ বছর পুজোর কিছু দিন আগে থেকেই অন্য শিক্ষিকারা বলতে শুরু করেন, তাঁরাও পুজো করবেন। প্রধান শিক্ষিকা নিজেও পুজোয় বসবেন বলে জানিয়েছেন। সঙ্গে থাকবেন শিক্ষিকা বিদিশা রায়, সুস্মিতা সিংহরায়, পারমিতা ভৌমিক, মৌমিতা মালাকার, সুমনা ঘোষদস্তিদার এবং জয়া চক্রবর্তী। শিক্ষিকারা সকলে মন্ত্রের বই এবং সরস্বতী পুজো পদ্ধতি সংগ্রহ করেছেন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সে সব মুখস্থের পালা। আজ পুজো হবে। পুজোর মন্ত্র পড়ে সড়গড় করতে এদিন বেলা গড়িয়ে যায়। আলপনা আঁকাও শুরু হয় এ দিন বিকেল থেকে। ততক্ষণে সূর্য কমলা রং নিয়ে স্কুল বাড়ির একদিকে হেলে পড়েছে। দেবী সরস্বতীর সামনে আলপনা আঁকাতে ব্যস্ত স্কুলেরই ছাত্রী সাকিনা, মুসকান, রুকসানাদের হাতও তখন আকাশের মতো কমলা রঙে মাখামাখি।