ফাঁকা: পসরা আছে, ক্রেতা কই? পুজোর আগে এমন ছবিই দেখা গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের নানা জায়গায়। ফাইল চিত্র
শেষের দিন তিনেক ভিড় উপচে পড়েছিল বাজারে। তাতে আশা জেগেছিল। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ীদের গুদাম এখনও বাক্সে ঠাসা। পরিবহণ ব্যবসায়ীদের দাবি, অন্তত ত্রিশ শতাংশ কম আয় হয়েছে এ বার। খুচরো এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের দাবি, দামে ছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়লেও গত বছর থেকে এ বার বিক্রি একশো টাকায় কমেছে ৪০ টাকা। বহিরাগতদের বেশি আনাগোনা নেই বলে জলপাইগুড়ি জেলা সদরের বাজার মূলত বিভিন্ন উৎসবের দিকেই তাকিয়ে থাকে। দুর্গাপুজো তার মধ্যে প্রধান। সেই পুজোতেই এ বার মন্দার জেরে ব্যবসায় ধস এতটাই নেমেছে, কালীপুজোর আগে নতুন করে ঘরে মাল তুলবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
জলপাইগুড়ি জেলা ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাহী সদস্য সুদীপ সিংহের কথায়, “এখনও যা হিসেব পেয়েছি তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে বেশি করে মাল তোলেন সকলে। আগের জমে থাকা পোশাকও থাকে। পুজোর সময় প্রায় সব বিক্রি হয়ে যায়। কালীপুজোর জন্য নতুন করে মাল আনতে হয়। এ বছর এখনও গুদাম অর্ধেক ভর্তি।”
তৈরি পোশাক-সহ অন্যান্য পণ্যের বিক্রি কমার সরাসরি প্রভাব পড়েছে পরিবহণ শিল্পে। যত বিক্রি বাড়ে ততই গুদামে পণ্য আসে এবং সেখান থেকে দোকানে যায়। পণ্যের এই নিয়ে আসা এবং নিয়ে যাওয়া-র কাজ করে পরিবহণ সংস্থাগুলি। প্রতিবার যেখানে পুজোর আগের কয়েক সপ্তাহে এক একটি গুদামে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশবার আনা নেওয়া করতে হয়তো এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে দশ থেকে পনেরো বারে। জলপাইগুড়িতে কাজ করা ছয়টি পরিবহণ সংস্থা নিজেদের ব্যবসা কমে যাওয়ার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছে ব্যবসায়ী সমিতিকে।
বাজারে মন্দার জের পড়েছে পুজোর আয়োজনেও। চলতি বছর নজিরবিহীন ভাবে পুজোর চাঁদাও কমিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির দাবি, তারা বাধ্য হয়েছেন। পুজোর মুখে জলপাইগুড়িতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে একটি শপিং মলও। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় ব্যয় সঙ্কোচ, বহু সরকারি অধিগৃহীত সংস্থার মাইনে বাকি থাকা থেকে শপিং মল বন্ধ হওয়ার ফলে একাংশের হাতে নগদ কমেছে। তার প্রভাব বাজারে পড়েছে। সেই প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসায়র ওপর নির্ভর করে থাকা পরিবারগুলি। তাঁদের কাছেও নগদ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ ভাবে পুরো বাজারে মন্দা ছড়িয়েছে।
অসমে এনআরসি-র জেরও কিছুটা ডুয়ার্সের বাজারে পড়েছে। ময়নাগুড়ির একটি পোলট্রি ফার্মের মালিক বাবুল দাস বললেন, “আমার ফার্মেও এ বার বিক্রি কম। প্রতিবার অসম থেকে ক্রেতা আসতেন। এবার তাঁরা আসেননি, এনআরসি আতঙ্ক অসমের বাজারটা শেষ করে দিয়েছে।”
তবে পুজোর কদিন জলপাইগুড়ির খাবারের হোটেল, রেস্তোরা, পানশালা, ফুটপাতের দোকানে ভিড় উপচে পড়েছিল। খাবারের দোকানের বিক্রিতে মন্দা তেমন থাবা বসায়নি বলেই দাবি।