চলছে বিক্ষোভ। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র।
অস্থায়ী কর্মী, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র আন্দোলনের জেরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মী-আধিকারিকদের বেতন আটকে গেল। অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন এবং পড়ুয়াদের বৃত্তির টাকাও আটকে। কারণ, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে আন্দোলনের জেরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের কাজকর্ম বন্ধ। শুক্রবার পর্যন্ত ফিনান্স বিভাগ-সহ প্রশাসনিক কোনও বিভাগই খুলতে দেননি আন্দোলনকারীরা। তাতে শুক্রবার, মাসের প্রথম দিন বেতন পেলেন না কেউই। শনিবার এবং রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। অস্থায়ী কর্মীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে এ দিনের বৈঠক ঠিক হয়েছে, পুরো বিষয়টি উপাচার্য সি এম রবীন্দ্রনকে জানিয়ে অস্থায়ী কর্মী এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা বহাল রাখতে। উপাচার্য কী নির্দেশ দিচ্ছেন তা সোমবার পর্যন্ত দেখা হবে। না হলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক আধিকারিকেরা তা করার জন্য ‘ক্ষমতা’ দেবেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল উপাচার্য সম্মতি না-দিলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিভাগীয় প্রধান এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের মত নিয়ে কি সেই কাজ করতে পারেন? তা কতটা বৈধ? বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাশংই মনে করছেন তা করা হলেও, সেটা বৈধ নয়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘বৈঠক হয়েছে। সেই মতো বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে।’’ উপাচার্যের
সঙ্গে এ দিনও বহু চেষ্টা করে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ দিন কোচবিহারের কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাগডোগরায় নামেন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আন্দোলনকারীরা তার সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানিয়েছেন। ফিরে এসে বেলা ১২টা থেকে তাঁরা ওই বৈঠকে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগ সূত্রে খবর, বেতনের নথিপত্র মাসের প্রথম দিন ব্যাঙ্কে জমা করতে হয়, সেই মতো বেতন হয়। আন্দোলনের জেরে, ফিনান্স বিভাগ বন্ধ থাকায় কাজকর্ম করা যায়নি। তাই শিক্ষক, আধিকারিক, কর্মী মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশি লোকের বেতন আটকে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সমস্ত বিভাগীয় প্রধান এবং প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ দিন কনফারেন্স হলে বৈঠক হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ করা হয়েছে, উপাচার্যকে আর্জি জানাতে, অস্থায়ী কর্মী এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির নির্দেশ বাতিল করতে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে যে নির্দেশিকা দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করতে। এ দিন বৈঠকে ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করতে সকলেই মত দেন। বৈঠকে স্থির করা হয়, উপাচার্য আর্জি ফেরালে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে সকলেই ক্ষমতা দেবেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বেতন বৃদ্ধির যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা কার্যকর করতে। আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে বর্তমান রেজিস্ট্রারের। তার আগেই দাবির বিষয়টি মেটাতে তৎপর আন্দোলনকারীরা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র আহ্বায়ক রঞ্জিত রায় বলেন, ‘‘এ দিন বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আমরা মেনে নিয়েছি। তবে বেতন বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত
আন্দোলন চলবে।’’