আরএসএস অনুমোদিত জলপাইগুলি সেবা ট্রাস্টের নামে কেনা বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
লক্ষ্য চা বলয়-সহ গোটা জেলায় কব্জা করা। সূত্রের খবর, তাই প্রায় ৮৫ লাখ টাকা খরচ করে জলপাইগুড়ি শহরের শান্তিপাড়ায় ১৫ কাঠা জমি এবং তার উপরে তিনতলা বাড়ি কেনা হল আরএসএস অনুমোদিত জলপাইগুলি সেবা ট্রাস্টের নামে। রেজিস্ট্রি খরচ মিলিয়ে যা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই দাবি। এর মধ্যেই বর্তমান মালিককে ৪০ লক্ষ টাকা আগাম দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এই সব দেখেশুনে জেলার এক তৃণমূল নেতার কটাক্ষ, ‘‘দেশের বেশির ভাগ মানুষ একবেলা খেতে পায় না। আর সঙ্ঘ এত টাকা দিয়ে বাড়ি কিনছে!’’ তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘টাকা ছড়িয়ে বেশি দিন সব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’’
সঙ্ঘের তরফে অবশ্য সরাসরি এই নিয়ে কিছু বলা হয়নি। সূত্রের খবর, বছর কয়েক আগে শিলিগুড়ির দুই ব্যবসায়ী জলপাইগুড়ির এক পরিচিত আয়কর আইনজীবীর থেকে বাড়িটি কিনেছিলেন। এখন সঙ্ঘ চাইছে, জলপাইগুড়িতে দ্রুত কাজ শুরু করতে। জমি কিনে বাড়ি করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই তৈরি বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত, বলা হচ্ছে সূত্রের তরফে। বিপুল টাকা দিয়ে বাড়ি কেনায় বির্তক হতেই পারে ধরে নিয়ে সঙ্ঘ গোপনীয়তা বজায় রেখেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে।
সূত্রের খবর, সঙ্ঘের অনুমোদিত জলপাইগুড়ি সেবা ট্রাস্ট নামে একটি সংস্থার নামে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য তথা ট্রাস্টি আইনজীবী অজয়কুমার সিঙ্ঘানিয়া বলেন, “বাড়িটি সংস্কার করে সেবা কাজ করা হবে। সেবাই আমাদের প্রধান কাজ।” বাড়ির দাম প্রসঙ্গে অজয় বলেন, “যাঁরা বাড়ির মালিক তাঁরা ব্যবহার করছিলেন না। তাই আমাদের ট্রাস্টকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন।”
লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়িতে বিপুল জয় পায় বিজেপি। চা বলয়ের থেকে সমর্থন উপচে পড়ে গেরুয়া বাক্সে। কৃষি বলয় থেকেও প্রচুর ভোট পেয়েছিল তারা। রাজনৈতিক নেতাদের দাবি, পুরোটাই সঙ্ঘের কৃতিত্ব। গত মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে যে মিছিল হয়েছে, তাতে লোক নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও সঙ্ঘের নেতাদের। আগামী বিধানসভার কথা মাথায় রেখে ডুয়ার্সের চা বলয়-সহ জেলায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে বহু পরিশ্রম এবং লোকবল দরকার। সেই কাজকে সুষ্ঠু ভাবে সারতে বড় দফতর দরকার, সেটা বিজেপিরই কেউ কেউ বলছেন।
সঙ্ঘ সূত্রের খবর, জলপাইগুড়িতে আরএসএসের সংগঠন ও কাজ বাড়ছে। এতদিন জেলা সদরের অফিসে একজন প্রচারক দিনে-রাতে থাকতেন। আগামী মাস থেকে পাঁচ জন প্রচারক থাকবেন। বাইরে থেকে প্রচারকরা আসবেন। প্রতি রাতে কমপক্ষে ১৫ জন থাকতে পারেন, এমন পরিকাঠামো-সহ অফিস চাইছিল সঙ্ঘ। সঙ্ঘের এক কার্যকর্তার কথায়, “গুরু পূর্ণিমা, রাখি, ১৫ অগস্ট বা ২৬ জানুয়ারিতে সঙ্ঘের বার্ষিক উৎসবগুলির সময় এখন দুশো-আড়াইশো জনের ভিড় হচ্ছে। অফিস ছোট্ট হওয়ায় অর্ধেকের বেশি লোককে বাইরেই থাকতে হয়। তাই বড় অফিস প্রয়োজন।”
শহরের শান্তিপাড়ার বিশাল বাড়িটি দেখেই পছন্দ হয়ে যায় তাঁদের। এক তৃণমূল নেতার কটাক্ষ, “ইচ্ছে হল, আর জলপাইগুড়ির মতো অবাণিজ্যিক শহরেও কোটি টাকা দিয়ে জমি-বাড়ি কিনে ফেলল সঙ্ঘ। বোঝাই যাচ্ছে ওদের অর্থবল কতটা। টাকা ছড়িয়ে অবশ্য বেশিদিন নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না।”