সদ্যোজাতদের সঙ্গে রয়েছে মা রিকা। —নিজস্ব চিত্র।
শোক কাটিয়ে আবার খুশির হাওয়া শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে। তিন সন্তানের জন্ম দিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রিকা। শনিবার পার্ক ঘুরে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, মা এবং তার শাবকেরা সুস্থই আছে। কিন্তু শাবকদের এখনও লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘শাবকগুলির এখনও লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি। যে হেতু মা সারাক্ষণ ওদের জাপটে ধরে রেখেছে, তাই তা করা যাচ্ছে না। লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হলেই ওদের নামের ব্যাপারে ভাবা যাবে।’’
কয়েক দিন আগেই পার্কের সাদা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কিকার দ্বিতীয় শাবকটির মৃত্যু হয়। প্রথম শাবকটির মৃত্যু গত মাসেই হয়েছিল। জন্মের ঠিক পরের দিন। তার এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় শাবকের মৃত্যুতে পার্ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। দুই শাবকের মৃত্যুর ঘটনায় রিপোর্টও তলব করেছিল বন দফতর। তার পরেই তিন শাবকের জন্ম দিল রিকা। ঘটনাচক্রে, রিকা এবং কিকা— বেঙ্গল সাফারি পার্কের প্রথম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিলার এই দুই সন্তানের নামকরণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার সকালে পার্কে পৌঁছন জ্যোতিপ্রিয়। সঙ্গে ছিলেন বন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। সাফারি পার্কের বিভিন্ন কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন বনমন্ত্রী। পাশাপাশি, আগামী দিনে আরও কী কী কাজ করা যেতে পারে সাফারি পার্কে, তার তালিকাও তৈরি করা হয়। এর পর বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘রিকা তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সকলকেই কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও পার্কের অন্যান্য কর্মীরা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন।’’
সাফারি পার্কের উন্নয়নমূলক কাজ প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় জানান, শিক্ষামূলক সিনেমা দেখাবার জন্য নতুন করে থিয়েটার তৈরি করা হয়েছে। একটি ইন্ডোর, অন্যটি আউটডোর। বেশ কিছু নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বাঘ সাফারির জন্য বাড়ানো হয়েছে আরও ২৩ হেক্টর জায়গা। সিংহ সাফারিও শুরু হবে। মন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘পার্কের গেটগুলিকেও আরও বড় করে সুসজ্জিত করে তোলা হবে। পাশ দিয়েই এশিয়ান হাইওয়ে যাবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য ওয়াটার এটিএম বসানো হয়েছে। আরও বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। সেগুলো আমরা কলকাতায় ফিরে আলোচনা করব। কত টাকা বরাদ্দ করা যেতে পারে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।’’
অন্য দিকে, শাবক মৃত্যুর কারণ নিয়ে কথা বলেন প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত, কিকা মা হওয়ার উপযুক্ত ছিল না। সাদা বাঘ খুব ন্যারো জেনেটিক বেসের উপর তৈরি হয়। নানা রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে তারা জন্মগ্রহন করে। সাদা বাঘকে শুধুমাত্র সাদা বাঘের সঙ্গেই ব্রিডিং করানো হয়। এই বাঘটির ক্ষেত্রে ক্যানাইন ডিস্টেম্পার হয়েছিল। বাঘের জন্য এটা মারাত্মক রোগ। আফ্রিকায় অসংখ্য সিংহ মারা গিয়েছে এই রোগে। আমাদের ভাগ্য ভাল, এই বাঘটিকে আমরা বাঁচাতে পেরেছি এই রোগ থেকে। এর পরেও সাদা বাঘটি অন্তঃসত্ত্বা হয়। দু’টি বাচ্চা প্রসব করে। তবে প্রসবের পর সে এতটাই ক্লান্ত ছিল যে একটি বাচ্চার উপর সে শুয়ে পড়ে। ওই বাচ্চাটি সেখানেই মারা যায়। অন্য শাবকটির ফুসফুসে প্রায় আড়াই সেন্টিমিটারের ক্লড থাকে দেখা যায়। যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।’’