মৃতা সোমা সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে এক মধ্যবয়স্কার দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য শিলিগুড়ি পুরনিগমের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দপল্লি এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার নাম সোমা সরকার। ৫১ বছর বয়সি ওই মহিলার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বেঁধেছে। ফ্ল্যাটের অন্যান্য আবাসিকের বক্তব্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে মহিলার কোনও সাড়াশব্দ ছিল না।
পেশায় কাপড়ের ব্যাবসায়ী সোমা ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তাঁর মেয়ে সকাল থেকে বার বার মাকে ফোন করেন। কিন্তু ফোনে না পেয়ে তিনি আবাসনের অন্য আবাসিকদের কাছে ফোন করে মায়ের খোঁজ করেন। এর পর সোমাকে ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙেন প্রতিবেশীরা। তাঁদের দাবি, ঘরে ঢুকে দেখা যায় বিছানায় সোমার নিথর দেহ পড়ে ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক টিম। পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়ির জিনিসপত্র, বিছানা পরিপাটি করে গোছানো ছিল। তবে মৃতার শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তাঁর গলাতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, সোমার দুই মেয়ে। তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে স্বামী এবং বড় মেয়ের মৃত্যুর পর মানসিক ভাবে খানিকটা ভেঙে পড়েছিলেন ওই মহিলা। ছোট মেয়ে বিবাহিতা। তিনি থাকেন অন্যত্র। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতেও মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সোমা। শনিবার সকালে আবার সোমাকে ফোন করেন তাঁর মেয়ে। কিন্তু ফোন না তোলায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
ফ্ল্যাটের বেশ কয়েক জায়গায় রক্তের দাগ মিলেছে। সোমার দেহ যে বিছানা থেকে উদ্ধার হয়েছে, তা পরিপাটি করে গোছানো ছিল। ফ্ল্যাটের দরজাও বাইরে থেকে বন্ধ করা ছিল। খুন নাকি আত্মহত্যা, এ নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। আত্মহত্যাই যদি করে থাকেন, সেটা কী ভাবে করেছেন, এ নিয়েও রহস্য দানা বাঁধতে শুরু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী রুমকি ঘোড়াইয়ের কথায়, ‘‘কাকিমার মেয়ে আমাকে ফোন করে মায়ের কথা জানতে চায়। আমি ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি, বাইরে থেকে দরজা আটকানো। তার পর অন্যান্যদের খবর দিই। দরজা ভেঙে দেখি, কাকিমা বিছানায় শুয়ে রয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি যে মারা গিয়েছে। পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলেই মনে হচ্ছে।’’
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘একটি ফ্ল্যাট থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে। ফরেন্সিক টিম-সহ আমাদের পদস্থ আধিকারিকেরা পৌঁছেছেন ঘটনাস্থলে। তবে এখনই কোনও মন্তব্য করব না। তদন্ত চলছে।’’