ভাগ্নের গ্রেফতারির খবর পেয়ে কলকাতায় ছুটে এসেছেন যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত হিমাংশু কর্মকারের মামা এবং ভাই। —নিজস্ব চিত্র।
জামাইবাবু গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বোন একা হাতে তিন ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। বড় ভাগ্নে হিমাংশু কর্মকারকে নিয়ে তাঁদের অনেক স্বপ্ন। গর্বও ছিল। যাদবপুরকাণ্ডে সেই ভাগ্নের গ্রেফতারির খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা ছুটে এসেছেন বিশ্বরূপ দাস। তাঁর দাবি, কিছু একটা ভুল হচ্ছে তদন্তকারীদের। তাঁর ভাগ্নে কাউকে র্যাগিং করার মতো ছেলে নন। বরং তাঁকেই কোনও দাদা চাইলে ‘চমকাতে পারে’।
বোন রয়েছেন মুর্শিদাবাদের বাড়িতে। শনিবার ভাগ্নের জন্য কলকাতায় এসেছেন বিশ্বরূপ। তাঁর সঙ্গে এসেছেন আর এক বোনের ছেলে। বিশ্বরূপের কথায়, ‘‘আমার ভাগ্নে বড়দের দিকে চোখ তুলে তাকায় না পর্যন্ত। লাজুক, ভদ্র ছেলে। ও র্যাগিং করবে কাউকে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় আমাদের কাছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওকে কেউ র্যাগিং করতে পারে।’’
যাদবপুরকাণ্ডে শুক্রবার তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন হিমাংশু। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের নিমতিতায় তাঁর বাড়ি। পরিবারে আছেন এক ভাই, দিদি এবং মা। বাবা মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। মাস দুই হল অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি করছেন হিমাংশু। তবে থাকতেন যাদবপুরের হস্টেলেই। তবে তাঁর মামার দাবি, হস্টেল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ভাগ্নে। সল্টলেকে একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথাও এগিয়েছিল। হস্টেল থেকে জিনিসপত্র সরানোর কাজ শুরু করেছিলেন হিমাংশু। এমনকি, শেষ বার যখন বাড়ি গেলেন, তখন বেশ কিছু জিনিস, বইপত্র ইত্যাদি নিয়ে গিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, ভাড়াঘরে চলে যাওয়ার পর আবার জিনিসগুলো নিয়ে আসবেন। শেষ বার বাড়ি যাওয়ার সময় হিমাংশু মামার বাড়িতেও কয়েক দিন কাটিয়েছেন। কলকাতা ফেরার কয়েক দিনের মধ্যে এমন একটি অনভিপ্রেত ঘটনায় তিনি জড়িয়ে পড়বেন, তা ভাবতে পারেননি পরিবারের কেউ।
ধৃত হিমাংশুর পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিমতিতার স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবোদয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলের পাঠ শেষ হওয়া ইস্তক এ পর্যন্ত পড়াশোনার সূত্রে বাড়ির বাইরেই থাকেন হিমাংশু। তাঁর দিদিও কলকাতায় পড়াশোনা করেন। মা স্থানীয় শেরপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিমাংশু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতকোত্তর করেন। শুক্রবার রাতে সেই হিমাংশুর গ্রেফতারির খবর চাউর হতে বিস্মিত তাঁর প্রতিবেশীরা। শনিবার সকাল থেকে নিমতিতার কর্মকারপাড়ায় তাঁর বাড়িতেও তালা পড়েছে।