অস্ত্র দেখিয়ে মোটরবাইক চালককে হুমকি বন্ধ সমর্থনকারীর। বালুরঘাটের থানা মোড়ে। ছবি: অমিত মোহান্ত
সকাল থেকে তির-ধনুক, লাঠি তলোয়ার নিয়ে রাস্তা ও বাজারে নামলেন বন্ধ সমর্থকেরা। বালুরঘাট শহরে অল্প সংখ্যক যে ক’টি দোকান খোলা ছিল, বন্ধ হয়ে যায়। চড়া রোদ উপেক্ষা করে সাইকেল, মোটরবাইকে চেপে সোমবার অস্ত্র হাতে বনধ্ সমর্থকেরা শহর-জুড়ে টহল দিলেন। দণ্ডি-কাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের ডাকা বাংলা বন্ধে এ দিন কিছুটা প্রভাব পড়ল দক্ষিণ দিনাজপুরে। বালুরঘাট শহরেই বাড়ি দণ্ডি কাণ্ডে অভিযোগের আঙুল ওঠা তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর। শহরে প্রচুর বাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। তবে পুলিশ কার্যত ছিল ‘মৌনী’। কেন পুলিশ সক্রিয় ভাবে বন্ধ সমথর্কদের বাধা দিল না জানতে চাওয়া হলে জবাব দেননি পুলিশ সুপার রাহুল দে। তিনি শুধু বলেন, ‘‘জেলায় বন্ধ ছিল শান্তিপূর্ণ। অশান্তির কোনও অভিযোগ মেলেনি।’’ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের তরফেও বন্ধের বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কর্মীদের ঘর থেকে বের করে পুরসভা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। প্রদীপ্তা পুরসভার উপ-পুরপ্রধানও। তাঁকে ওই পদ (উপ-পুরপ্রধান) থেকে অপসারণের দাবি তোলেন বন্ধ সমর্থকেরা।
বালুরঘাটে প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাস্তায় পিকেটিং এড়িয়ে যাওয়ার সময় এক মোটরবাইক আরোহীকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে আদিবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে। তা অবশ্য অস্বীকার করেছেন আদিবাসী নেতৃত্ব। বাধা পেয়ে একটি টোটো উল্টে এক শিশু ও মহিলা জখম হন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়। সেঙ্গেল অভিযানের রাজ্য নেতা বিক্রম টুডু বলেন, ‘‘বালুরঘাটে দণ্ডি কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী গ্রেফতার না হওয়ায়, ওই ক্ষোভ স্বাভাবিক!’’ প্রদীপ্তা ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের।
বিজেপি আগেই এই বন্ধকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল। শাসক দলের তরফেও এই বন্ধকে ‘আদিবাসীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ বলে রবিবার কালিয়াগঞ্জের সভায় রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিকদের জানান।
এ দিন রাস্তায় সরকারি বাস দেখা যায়নি। চলেনি বেসরকারি যানবাহন। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বাজার, অফিস, ব্যাঙ্ক, এমনকি, চায়ের দোকান বন্ধ ছিল। বালুরঘাটের পাশাপাশি তপন, গঙ্গারামপুর, বংশীহারি, কুশমণ্ডি ও হরিরামপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বন্ধ সমর্থকেরা। সেঙ্গেলের রাজ্য নেতা বিক্রম টুডু বলেন, ‘‘প্রকৃত দোষী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা না হলে, আন্দোলনের আগুন জ্বলবে। এ দিন বাংলা বন্ধ হল। এর পরে ভারত বন্ধ হবে।’’