Heavy Rainfall Bhutni

২৬ বছর পরে ফের বাঁধে আশ্রয়, ক্ষোভ

এ বার দেড় মাস ধরে অসংরক্ষিত এলাকার পাশাপাশি গঙ্গা, কোশী নদীর জলে ভাসছে ভূতনির সংরক্ষিত এলাকাও। জলবন্দি কয়েক হাজার মানুষ, দাবি প্রশাসনের।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ভুতনি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:২০
Share:

কাটা বাঁধ দিয়ে বেরোচ্ছে প্লাবিত ভুতনির গঙ্গার জল। ছবি: উত্তম বিশ্বাস

সেতুর সংযোগকারী রাস্তায় হাঁটু-জল। সেখানে দাঁড়িয়ে পুরুষদের সঙ্গে পাটের আঁশ ছড়াচ্ছেন এক দল মহিলা। চারপাশে কেউ নৌকা ধরার জন্য ছুটছেন, কেউ আবার ত্রাণের গাড়ি দেখে ভিড় জমাচ্ছেন সেতুর উপরে। বর্ষার সময় ভূতনির এই ছবি কি ফি বছরের? প্রশ্ন শুনে পাটের আঁশ ছড়ানো থামিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব মায়া চৌধুরী বলেন, ‘‘বউ হয়ে যখন ভূতনিতে এসেছিলাম, সে বার ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধের উপরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। তখন গঙ্গার উপরে সেতু ছিল না। যোগাযোগের ভরসা ছিল নৌকা। দীর্ঘ ২৬ বছর পরে ফের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিতে হয়েছে।’’

Advertisement

এ বার দেড় মাস ধরে অসংরক্ষিত এলাকার পাশাপাশি গঙ্গা, কোশী নদীর জলে ভাসছে ভূতনির সংরক্ষিত এলাকাও। জলবন্দি কয়েক হাজার মানুষ, দাবি প্রশাসনের। গঙ্গার জলস্তর বেড়ে এ বার চরম বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। তাই প্লাবিত হয়েছে ভূতনির সংরক্ষিত এলাকাগুলিও। স্থানীয়দের কথায়, ভূতনির চার পাশেই নদী। দেখতে অনেকটা চায়ের প্লেটের মতো। ভূতনিতে মানিকচক ব্লকের উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর, হীরানন্দপুর— তিনটি পঞ্চায়েত রয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ভূতনির জনসংখ্যা ৮৯,০২০। এখন সে সংখ্যা আরও বেশি হবে। তিনটি হাই স্কুল, সিনিয়র মাদ্রাসা, প্রাথমিক স্কুল, ডাকঘর, গ্রামীণ হাসপাতাল, থানা সবই রয়েছে।

ভূতনিকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে ১৯৭৩ সালে গনি খান চৌধুরী সেচমন্ত্রী থাকাকালীন রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। ভূতনির চারপাশেই বাঁধ দেওয়া হয়। তার পরেও কেন জলে ভাসছে ভূতনি? হীরানন্দপুরের কালুটোনটোলার বাসিন্দা হারাধন মণ্ডল বলেন, “কালুটোনটোলা ও বসন্তটোলার মাঝে দেড়শো মিটার অংশে এখনও বাঁধ গড়ে ওঠেনি। উন্মুক্ত অংশ দিয়ে নদীর ঢুকে পুরো ভূতনিকে ভাসিয়ে দিয়েছে। বাঁধ থাকলে, এ ভাবে হয়তো আমাদের দেড় মাস ধরে জলবন্দি হয়ে থাকতে হত না!” নদীর জল ভূতনি থেকে বের করতে পাম্প বসানো হয়েছিল। তাতেও বন্যা-পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় দক্ষিণ চণ্ডীপুরে বাঁধের প্রায় ৪০ মিটার অংশ নিজেরাই কেটে দেন গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা যতীন মণ্ডল বলেন, “বাঁধ কেটে দেওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। জলবন্দি দশা থেকে ভূতনিবাসীকে স্বস্তি দিতে এ ছাড়া উপায় ছিল না।”

Advertisement

ভূতনিতে বাঁধের কাজ অসমাপ্ত থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মন্তব্য করতে চাননি জেলা প্রশাসনের কর্তারা। দক্ষিণ মালদহের সাংসদ কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী বলেন, “বন্যা, ভাঙন রোধে যা কাজ হয়েছে তা কংগ্রেসের সময়। বরকত সাহেব, ডালুবাবু কাজ করেছেন। রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের নামে শুধু দুর্নীতি করেছে। যার ফল ভূতনির মানুষকে পেতে হচ্ছে।” পাল্টা, রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “ভাঙন রোধে জেলায় কোটি কোটি টাকার কাজ তৃণমূল সরকার করেছে। ভূতনির বাঁধের অসমাপ্ত কাজও করা হবে। দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement