Rajganj BDO visits locals

নাম শোনেননি কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের, জ়িরো পয়েন্টের গ্রামে বিডিও শুনলেন বঞ্চনার বৃত্তান্ত

জ়িরো পয়েন্টের আগেই অবস্থান। তাই খাতায়কলমে ভারতের বাসিন্দা তাঁরা। যদিও সরকারি কোনও পরিষেবাই পাননি এত দিন ধরে। সেই গ্রামেই গেলেন স্থানীয় বিডিও। আশ্বাস দিলেন সরকারি পরিষেবা চালুর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

রাজগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৫
Share:

গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন বিডিও প্রশান্ত। — নিজস্ব চিত্র।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ধারেপাশে এমন অনেক গ্রাম আজও আছে যারা কাঁটাতারের ও পারে বাস করলেও খাতায়কলমে ভারতের বাসিন্দা। কারণ, অবস্থানগত ভাবে জ়িরো পয়েন্টের আগেই অবস্থান সেই সব গ্রামের। সে রকমই, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা চম্পদগছ গ্রাম। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের চম্পদগছে গ্রামে ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের বাস। ভোটাধিকার থাকলেও সমস্ত সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। এ দিকে, সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় বিএসএফের মর্জিতে চলে জীবন। ঘর থেকে বেরোলেই দেখাতে হয় নিজের পরিচয়পত্র। অনেকেই মানেন, মানুষ নয়, এখানে দাম বেশি ওই কাগজের পরিচয়পত্রটির।

Advertisement

লক্ষ্মীর ভান্ডার বা কন্যাশ্রীর মতো সরকারি পরিষেবা সম্পর্কে তাঁদের সম্যক কোনও ধারণা নেই। এ ভাবেও যে বেঁচে থাকা যায় তা শুনে প্রথমে চমকে উঠেছিলেন বিডিও প্রশান্ত বর্মন। ঠিক করেন, ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলবেন। প্রশান্ত পৌঁছন চম্পদগছ গ্রামে, কথা বলেন সরকারি প্রকল্প নিয়ে। বিডিওকে সামনে পেয়ে গ্রামবাসীরা বলেন, ‘‘ভোটের সময় আমরা ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ভোট দিই। কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্রের কোনও সরকারি পরিষেবাই আমাদের কাছে পৌঁছয় না৷’’

দেশভাগ হওয়ার আগে থেকে এখানেই বাস করছেন। পরবর্তী কালে কাঁটাতারে ফালাফালা হয়েছে ভিটে। চাষবাসই মূল জীবিকা। প্রশান্ত বলেন, ‘‘রাজগঞ্জ ব্লকের দু-একটি গ্রাম পঞ্চায়েত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। চম্পদগছ গ্রামটিও সেই রকমই একটি। নিত্য দিন তাঁদের বিএসএফের হাতে নথি জমা দিয়ে কাজে বেরোতে হয়, স্কুল, কলেজে যেতে হয়। জ়িরো পয়েন্ট লাগোয়া ১৯০ জনের কাছে রাজ্য সরকারের পরিষেবা পৌঁছচ্ছে কি না সেটা সরজমিনে খতিয়ে দেখতেই আমার এখানে আসা।’’ প্রশান্তের সংযোজন, ‘‘সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই ধরনের গ্রামগুলোকে কাঁটাতারের এ পারে নিয়ে আসার কাজ শুরু হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া পিছিয়ে যাচ্ছে। কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তখন এত সমস্যা থাকবে না।’’ সরকারি পরিষেবা প্রদান নিয়ে বিডিও বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার কথা লিখে নিয়েছি। সকলে যাতে সরকারি সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পান সে বিষয়টি দেখছি। অতীতে দুয়ারের সরকারের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে বিএসএফ ক্যাম্প করতে দেয়নি বলে শুনেছি। তবে আগামীতে যখন দুয়ারে সরকার হবে তখন এখানে ক্যাম্প করব। নাগরিকদের জন্য আমাকে সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে হলেও আমি দুয়ারে সরকারের শিবির এখানে করব, এই কথা দিয়ে গেলাম।’’

Advertisement

অন্য দিকে, গ্রামবাসী সাফিরান হাসান বলেন, ‘‘এই প্রথম কোনও সরকারি প্রতিনিধি আমাদের গ্রামে এলেন। ভোটের সময় দলের লোক ও বিএসএফ বা পুলিশ ছাড়া গ্রামে সরকারি লোক আসতেন না। এই প্রথম এলেন। বিভিন্ন সরকারি পরিষেবার কথা বললেন। আমরা এত কিছু জানি না। তিনি আশ্বাস দিলেন, সরকারি পরিষেবা আমরা নাকি পাব।’’ গ্রামবাসী মুস্তাফা হোসেন বলেন, ‘‘বিডিও সাহেব এসে সব কিছুর খোঁজখবর নিলেন। দু-এক জন সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন বলে জানান, বাকিদের জন্য বিডিও অফিসে দ্রুত যোগাযোগ করতে বললেন। দুয়ারে সরকার ক্যাম্প এখানে করার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও সাহেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement