কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রাজ্যপাল তথা আচার্য বনাম রাজ্য সরকারের ‘দ্বন্দ্বের’ সুর চড়ল কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সফেলিকে সাসপেন্ড করলেন উপাচার্য নিখিলেশ রায়। এ দিন অস্থায়ী ভাবে প্রদীপকুমার করকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁকে রেজিস্ট্রারের অফিসে নিয়ে যান উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়, আব্দুল কাদের সফেলি আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজে জড়িত থাকতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রেও তাঁকে অনুমতি নিতে হবে। উপাচার্য বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সফেলি। উপাচার্য জানিয়েছেন, এর আগে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে করা ‘শো-কজ়’-এর জবাবে আব্দুল কাদের সফেলি যা উত্তর দিয়েছিলেন তা তদন্ত সাপেক্ষ। সে জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই বিষয়ে তদন্ত হবে। এর পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র নেতা সাবলু বর্মণ বলেছেন, ‘‘রেজিস্ট্রারকে এ ভাবে বরখাস্ত করা আইন-বিরোধী। আজই রাজ্য সরকারের তরফে চিঠি দিয়ে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনেই চলবে বলে আশা করি।’’
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্য এবং রাজ্যের বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেন নিখিলেশ রায়। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তাঁকে ওই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রাজ্যের তাতে সায় ছিল না। অভিযোগ, শুরু থেকেই রেজিস্ট্রার উপাচার্যের কাজে সহায়তা করছিলেন না বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গিয়েছে, রেজিস্ট্রার রাজ্যের শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মেনেই কাজ করছিলেন। তাতে সংঘাত চরমে ওঠে।
সেই বিরোধ তীব্র হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ৩০ এপ্রিল সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য তা নিয়ে আপত্তি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সমাবর্তন নিয়ে রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দবোসকে চিঠি দিয়েছিলেন রেজিস্ট্রার। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে সরব হন। দাবি করা হয়, উপাচার্য তথা পারচেজ় এবং টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যানের অনুমতি না নিয়ে পারচেজ় এবং টেন্ডার কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠক করেছেন রেজিস্ট্রার। চিঠি লিখে কিছু তথ্য জানতে চাইলে, উপাচার্যকে তিনি তা জানাননি। এর পরেই গত ২৪ এপ্রিল রেজিস্ট্রারকে ‘শো-কজ়’ করেন উপাচার্য। কিন্তু জবাবে সন্তুষ্ট হননি উপাচার্য। এর পরেই তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।