অনিয়ম: লেন ভেঙে লরি। নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের একটি জিপ দাঁড়ানো সড়কের এক পাশে। দু’জন পুলিশ অফিসার গাড়ি থামিয়ে চালকের থেকে কাগজপত্র চেয়ে নিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভোটের কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি নেওয়া হচ্ছে। শনিবার তখন দুপুর বারোটা। পুলিশের জিপ দেখে দূরে থেমে পড়ল একটি বালি বোঝাই ট্রাক। হঠাৎই ট্রাকটি লেন ভেঙে ঢুকে পড়ল পাশের সড়কে। সেখানে উল্টো মুখে সারিসারি গাড়ি আসছে। দেখা গেল তির গতিতে রাস্তার একপাশ দিয়ে ছুটতে থাকল ট্রাকটি। উল্টো দিক থেকে আসা কিছু গাড়ি হঠাৎ সামনে ট্রাক দেখে থেমে গেল, কোনও গাড়ি নেমে পড়ল পাশের নয়নজুলিতে। দেখে এক সিভিক কর্মী বলেন, “দেখুন কাণ্ড। ট্রাকের চালক ভেবেছে বুঝি নাকা তল্লাশি হচ্ছে। এই ভাবেই গেল দুর্ঘটনা ঘটে।” ঘটনাস্থল জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা সেতু।
ময়নাগুড়ি শহরে ঢোকার মুখে সড়ক বাঁক নিয়ে চলে গিয়েছে ধূপগুড়ির দিকে। একটি মুখ তোবড়ানো ট্রাক দেখে ক্যামেরা বের করলেন সঙ্গে থাকা চিত্রগ্রাহক। বড় লেন্সের ক্যামেরা দেখেই ট্রাকের গতি বেড়ে গেল। পাশ দিয়ে ট্রাকটি দুরন্ত গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে এক ঝলকেও স্পষ্ট দেখা গেল ট্রাকের একদিকে হেডলাইট সহ ইঞ্জিনের বেশ কিছু অংশ তুবড়ে গিয়েছে। গলগল করে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। পথচলতিরা কেউ নাকে-মুখে রুমাল চাপা দিলেন। এক পথচলতি বাইক আরোহীর মন্তব্য, “দেখেই বলে দেওয়া যায়, ট্রাকটির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই।’’
দোমহনী মোড়ে পৌঁছতে দেখা গেল, সাঁ সাঁ করে ছুটে যাচ্ছে বালি, পাথর বোঝাই ট্রাক। সাক্ষী ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে থাকা একজন সিভিক। নজরদারির জন্য সবসময়ে পুলিশের জিপ থাকে। সেটা গেল কোথায়? সিভিক ভলান্টিয়ারের উত্তর, “চা খেতে গিয়েছে হয়তো।”
জলপাইগুড়ি শহরে ঢোকার মুখে পাহাড়পুর মোড়। সেখানেও যান নিয়ন্ত্রণে একাধিক সিভিক কর্মী থাকেন। দেখা গেল, সরকারি বাস লেন ভেঙে ছুটে আসছে। আটকাচ্ছেন না কেন? এক সিভিক কর্মীর উত্তর, “লেন ভাঙছে নাকি, দেখিনি তো।”
শনিবার সকালে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে জলপাইগুড়ি থেকে ময়নাগুড়ি যাতায়াতের সময় দেখা গেল এমনই দৃশ্য। এই জাতীয় সড়কেই তিন দিন আগে বেশি পরিমাণ বোল্ডার বোঝাই ফিটনেস সার্টিফিকেটহীন একটি ট্রাক উল্টে যায় লেন ভেঙে উল্টো দিক থেকে আসা তিনটে ছোট গাড়ির উপরে। মৃত্যু হয় ১৪ জনের। তার পরেও জাতীয় সড়কের দৃশ্য বদলায়নি বলে অভিযোগ পথচারী এবং লগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “পুলিশ, ভূমি রাজস্ব দফতর, পরিবহণ দফতর মিলে যৌথ ভাবে নজরদারি চালাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে একটি পর্যালোচনা বৈঠকও হওয়ার কথা রয়েছে।”