পুলিশের সঙ্গে কথা। নিজস্ব চিত্র।
কলেজের হস্টেলে রাগিং রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যেই স্কুলের হস্টেলে বড়রা ছোটদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
শুক্রবারের রাতের অত্যাচারের বর্ণনা শুনেই যেন বার বার করে চমকে উঠছিলেন সেই ছাত্রদের অভিভাবকরা৷ তারপর আর নিজেদের সামলাতে পারেননি৷ স্কুল চত্বরের ভিতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা৷
কখনও বা স্কুলের টিচার্স রুমের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন, আবার কখনও ছুটলেন দোতালায়—দশম শ্রেণীর কক্ষে৷ উদ্দেশ্য, তাঁদের ছেলেদের উপর অত্যাচার করা ছাত্রদের নিজেদের হাতেই কড়া শাস্তি দিতে চান৷ বিষয়টি গুরুতর দিকে যাচ্ছে বুঝতে পেরে স্থানীয়রাই তখন তাঁদের সামলালেন৷ কিছু ক্ষণের মধ্যেই চলে এল পুলিশও৷ কিন্তু তাতেও, অভিভাবকদের ক্ষোভ দমল না৷ বিক্ষোভ অব্যাহত রইল৷
মঙ্গলবার সকাল থেকেই এমনই পরিস্থিতি জলপাইগুড়ির ধাপগঞ্জ গভর্মেন্ট স্পনসর্ড স্কুলের৷ যার জেরে স্কুলের পঠন-পাঠন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ গত শুক্রবার রাতে ওই স্কুলেরই হস্টেলে অষ্টম শ্রেণির আট ছাত্রের ওপর সিনিয়র কয়েকজন ছাত্র অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ৷ যার জেরে ওই রাতেই হস্টেল ছেড়ে পালায় এক ছাত্র৷ স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পালিয়ে যাওয়া ওই ছাত্র এই মুহূর্তে অসমে তার নিজের বাড়িতেই রয়েছে৷
সংবাদ মাধ্যমে নিজেদের ছেলেদের এমন পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেই এ দিন স্কুলে ছুটেছিলেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক-অভিভাবিকা৷ বাবা-মায়েদের কাছে পেয়েই মার খাওয়া ছাত্ররা অভিযোগ করেন, দশম শ্রেণির এক ছাত্রের দু’শো ত্রিশ টাকা হারিয়ে যাওয়ায়, সন্দেহের বশে তাদের ন’জনকে সেই রাতে বেল্ট দিয়ে বেধড়ক পেটায় কয়েকজন সিনিয়র৷ এমনকি বালতিতে জল ঢেলে তাতে মাথাও ডুবিয়ে দেওয়া হয়৷ রাত সাড়ে বারোটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অত্যাচারের পর এক ছাত্র পালালে অত্যাচার থামে৷ অনেকের শরীরেই রয়েছে বেল্টের দাগ৷ ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক সুভাষ রায়, নৃপতি রায়, সুমিতা রায়, সুষমা দাসদের অভিযোগ, এতবড় ঘটনা ঘটে গেলেও, স্কুলের তরফে এই ক’দিনে তাঁদের তো খবর দেওয়াই হয়নি, এমনকি মার খাওয়া ছাত্রদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত এ দিন রাতে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ছ’ছাত্রকে ভর্তি করান তাদের অভিভাবকরা৷
ইতিমধ্যেই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন৷ এ দিন ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে যান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কর্তারা৷ কমিটির চেয়ারম্যান বেবী উপাধ্যায় জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তাঁরা জেলাশাসককে তাদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবেন৷ জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানিয়েছেন, ‘‘রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’
১৯৭৯ সালে এই স্কুলটি চালু হয়৷ স্কুলের হস্টেলে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ১৮০জন ছাত্র রয়েছে৷ স্কুল পরিচালনার জন্য যে অ্যাডহক কমিটি রয়েছে, তার সম্পাদক জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামন্ত৷ স্বপনবাবু বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে ঠিক হয়েছিল, সে ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে৷’’ প্রধান শিক্ষিকা লিপিকা কর্মকার বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি৷ যথাযথ ব্যবস্থা হবে৷’’