শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব। —ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়ি পুরসভায় পানীয় জলের সঙ্কট। পথে নেমেছেন বামেরা। মেয়র গৌতম দেবের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ঘিরে ‘চোর চোর’ স্লোগান উঠেছে শহরের রাস্তায়। অন্য গাড়িতে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র।
শিলিগুড়িতে জলের দাবিতে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার শিলিগুড়িতে মেয়র স্বয়ং ঘোষণা করেছিলেন, পুরসভা থেকে যে জল সরবরাহ করা হয়, তা খাওয়া যাবে না। আগামী কয়েক দিন এই জলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। মেয়র জানিয়েছিলেন, পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত পুরনিগমের সরবরাহ করা পানীয় জল কেউ পান করবেন না। জলের মান খারাপ ধরা পড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পুরসভার তরফে। বিকল্প হিসাবে জলের পাউচ বিলি করা হচ্ছিল শহর জুড়ে। ২৬টি পানীয় জলের ট্যাঙ্ক বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। বুধবার থেকে শিলিগুড়িতে পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সেই ইস্যুকে সামনে রেখেই পথে নামেন বামেরা। সিপিএম এবং এসইউসিআইয়ের তরফে শিলিগুড়ি পুরসভায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। ছিলেন প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও।
শিলিগুড়িতে ভোট হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় দফায়, গত ২৬ এপ্রিল। জলসঙ্কটকে কেন্দ্র করে শহর জুড়ে যে বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে অস্বস্তিতে তৃণমূল। সেখানে ভোট এখনও না হয়ে থাকলে আরও বড় সমস্যায় পড়তে হত শাসকদলকে।
শিলিগুড়িতে বর্তমানে মহানন্দা থেকে জল নিয়ে তা পরিস্রুত করে পানীয় হিসাবে সরবরাহ করে পুরসভা। কিন্তু সেই জলের মান খারাপ ধরা পড়েছে বলে খবর। তাই পুরনিগমের তরফে তা পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও সেই জল গৃহস্থালির অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন মেয়র।
প্রাক্তন মেয়র অশোক বলেন, ‘‘সঙ্গত কারণেই শিলিগুড়ির মানুষ এখানে জল চাইতে এসেছেন। কেউ রাজনীতি করতে আসেনি। মানুষকে বিষাক্ত জল পান করানো হয়েছে। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে না? এঁদের পুরসভা চালানোর অধিকার নেই। আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘অদক্ষ কেউ যদি মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন, তা হলে কী হতে পারে দেখা যাচ্ছে। ২০ দিন ধরে শিলিগুড়ির মানুষ দূষিত পানীয় জল খেলেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। মেয়র তা জানতেনই না। যখন তিনি সব জেনে জল না খাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছেন, তার আগে উপযুক্ত ব্যবস্থা তিনি নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই চারদিকে এখন জলের হাহাকার। কালোবাজারি শুরু হয়েছে। মেয়র বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডের মানুষ সারা দিন জল পাবেন। বাকি ৪৬টি ওয়ার্ডের মানুষ দিনে এক বার জল পাবেন। এর থেকে প্রমাণিত, হয় মেয়র অদক্ষ, অথবা মেয়র পারিষদ এবং আধিকারিকেরা তাঁকে গদি থেকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।’’