প্রতীকী ছবি।
নামেই ‘পাতি’। আসলে কিন্তু মহার্ঘ্য। গরম যত বাড়ছে, ডাক্তারেরা যত উপদেশ দিচ্ছেন রোদ থেকে ফিরে লেবুর সরবত খেতে, ততই যেন অভাব বোঝা যাচ্ছে তার। পাতি লেবু।
এত দিন গরমের দিন হলেই বরফের টুকরো নিয়ে সরবতের গাড়ি ঘুরত মহল্লায়। আপনি চাইলেই সেই দোকানি তাঁর জলের প্রকোষ্ঠ থেকে অদ্ভুত দর্শন যন্ত্রে জল তুলে গ্লাসে ঢালতেন। তার পরে অর্ধেক লেবু একটি নিষ্পেষণ যন্ত্রে চিপে বানিয়ে দিতেন চটজলদি সরবত। এখন গরমে সেই লেবু জলও মুখ লুকিয়েছে।
কারণ, পাতি লেবু যে তিনটি বিশ টাকা।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, লেবুতে ভিটামিন-সি থাকে। গরমে শরীরের পক্ষে যা খুবই উপকারী। তাই গরমে লেবু-জলের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু গৃহস্থের হেঁসেলই হোক বা আনাজের ঝুড়ি, সব জায়গাই জানাচ্ছে— লেবু এখন ‘বাড়ন্ত’। ইংরেজবাজারের সরবত বিক্রেতা রবি রায় বলেন, “টক দইয়ের তৈরি লস্যির দাম গেলাস পিছু ২৫ টাকা। একটি পাতি লেবু দিয়ে এক গেলাস সরবত ২৫ টাকা দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দু’টি লেবু দিলে দাম আরও পাঁচ টাকা বেড়ে যাবে।” লেবু-জল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন আর এক ব্যবসায়ী রকি দাস। তিনি বলেন, “লেবু-জলের দাম গেলাস প্রতি ২৫ টাকা বললে খদ্দেরদের কাছে মার খেতে হবে। তাই আপতত তাই বিক্রি বন্ধ।” হোটেলের মেনু থেকেও এখন উধাও লেবু। মেডিক্যাল কর্মী প্রতীম সরকার বলেন, “কাজের সূত্রে দুপুরে হোটেলেই খেতে হয়। চেনা হোটেলে খেতে বসে লেবু চাইলে হোটেল কর্মীর বাঁকা চাউনি দেখতে হচ্ছে।”
মালদহের পাইকারি বাজারেই দশ টাকায় মিলছে ২-৩টি লেবু। আর খুচরো বাজারে সেই লেবুই ২০ টাকায় ৩টে। লেবুর নামের আগে এখন কার্যত উধাও পাতি শব্দটি। কেন লেবু আর পাতি নয়? বাজারে ঢুঁ মারলেই স্পষ্ট হবে কারণ। ইংরেজবাজারের লেবু বিক্রেতা নব সাহা বলেন, “দক্ষিণ ভারত থেকেই জেলায় বেশি পাতি লেবুর আমদানি হয়। পুজোর মরসুমে সেই রাজ্যগুলিতে বন্যা হওয়ায় লেবুও নষ্ট হয়েছে। জেলায় এখন লেবু আমদানি কম হচ্ছে।” ব্যবসায়ীদের এ-ও দাবি, রোজার সময় লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। প্রচন্ড গরমের জন্যও লেবু চাহিদা জেলায় বেড়েছে। কিন্তু জোগান নেই।
যদিও জেলায় ২৯৪ হেক্টর জমিতে পাতি লেবু চাষ হয়। উৎপাদন হয় ২৯৪০ মেট্রিক টন। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় বলেই জানিয়েছেন উদ্যান পালন বিভাগের কর্তারা। উদ্যান পালন দফতরের অধিকর্তা সামন্ত লায়েক বলেন, “পাতি লেবুর চাষের এলাকা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।”