নালিশ: বিমল-বিরোধী সেই পোস্টার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
নতুন বছরের শুরুতে পাহাড়ে শীতের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপও অব্যাহত। রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ের রাজনীতি চাকা ঘুরল কার্শিয়াংকে ঘিরেই।
সাতসকাল থেকে অনীত থাপার খাসতালুক কার্শিয়াং জুড়ে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে পোস্টার চোখে পড়ল। দু’দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি ভিডিয়ো (এই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি), যাতে কার্শিয়াংকে ‘শৌচাগার’ বলতে শোনা যায় বিমলকে। এই অভিযোগ এনে বিমলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কার্শিয়াঙের বাসিন্দাদের নাম করে এই পোস্টার পড়ে বলে সূত্রের খবর।
এ দিনই শিলিগুড়ি নামার আগে কার্শিয়াঙে থামেন গুরুং। বসেন সরকারি কার্শিয়াং ট্যুরিস্ট লজে। সেখানে গুরুং জানান, ওই ভিডিয়োয় মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। আগামী দিনে গোটা পাহাড়ের শাসনভার তিনিই দখল করবেন। তখন ‘লাল পতাকা’ দেখাবেন কয়েকজনকে। এ দিনই সিটং এলাকায় অনীতের জনসভা থাকলেও তিনি যাননি। দলের যুব ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সভা করেন। ভিড়ও হয় ভাল। গুরুং যখন লজে কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে ব্যস্ত, তখন অনীত ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে কমিউনিটি হলের উদ্বোধন করে কাটালেন কার্শিয়াঙের আশেপাশেই।
গুরুং বিকেলের আগেই শিলিগুড়ি নেমে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘কার্শিয়াং পর্যটনের দিক থেকে উন্নতি করেনি। গত তিন বছরে তো প্রশাসক কিছুই করেননি। পর্যটকেরা এখানে শৌচালয় করতে দাঁড়ান। এটার বদল করতে হবে। পুরো কথা না শুনিয়ে একটা অংশ দিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পাহাড়ের জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে। শাসনভার একদিন না একদিন আমার নিয়ন্ত্রণে আসবেই।’’
দার্জিলিং জেলায় ফিরেই গুরুং জানিয়েছিলেন, বিজেপিকে হারাতে ঘুরে ঘুরে কাজ করবেন। ২০ ডিসেম্বর থেকে দার্জিলিং থেকে তিনি শিলিগুড়ি এসেছেন। তরাইয়ের নেতাদের নিয়ে রবিবার বিকেলে শালুগাড়ায় বৈঠক করেন। অভিষেক এবং পিকের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা। একই রকম বৈঠকের কথা রয়েছে বিনয়, অনীতদেরও।
৭ জানুয়ারি কালিম্পঙে গুরুংয়ের সভা। ৯ জানুয়ারি কালিম্পঙে অনীতের সভা। পরপর দুই গোষ্ঠীর শক্তি প্রদর্শন, সংগঠন বাড়ানোর কাজ চলছে। শনিবারই গুরুংপন্থীরা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করেন। সেখানে ৫১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি গড়া হয়েছে। সদস্য অভিযান এবং কর্মী পিছু তহবিলের জন্য ১০ টাকা করে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কালিম্পঙে ক’দিন থেকে গুরুং থাকবেন ডুয়ার্সে। চা বলয়ে গুরুং সভা করবেন। সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘দলের বিস্তার এবং বিজেপিকে হারানোই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন গুরুং কার্শিয়াঙে ট্যুরিস্ট লজ থেকে বেরনোর সময় জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপার কনভয় সামনে দিয়ে যায়। এজন্য কিছুক্ষণ গুরুংকে লজেই বসার অনুরোধ করা হয়। অনীত-বিনয়পন্থীরা জানান, পাহাড়ের মানুষকে গুরুং বারবার বোকা বানিয়ে চলছেন। ২০১৭ সাল অবধি চা বাগান, পর্যটন, হোটেল, পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে মানুষের ক্ষতি ছাড়া কিছুই করেনি। তাই সাধারণ মানুষ পোস্টার দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছেন। অনীত বলেছেন, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আর হুঙ্কারের রাজনীতি আর পাহাড়ে চলবে না।