তপন ব্লকের শোলাকুড়ি গ্রামের বেহাল রাস্তা । ছবি অমিত মোহান্ত।
শোলাকুড়ি গ্রামের কৃষক জাফিরুদ্দিন মোল্লার দু’হাতে টিনের বাঁক। খালি পায়ে হেঁটে হজরতপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। শীতের দুপুরে শুকিয়ে কাঠ বেলেমাটি। ফলার মতো পায়ে বেঁধে। অসুবিধা হয় না? আগন্তুক দেখে থমকে দাঁড়ালেন গ্রামের আরও দুজন। ফসিউর সরকার, তুলা বেওয়া। তারা জানান, ২০১৫-১৬ থেকে এ পর্যন্ত এ ভাবেই হাঁটতে অভ্যস্ত তাঁরা। অভিযোগ, হজরতপুর থেকে রাঘবপুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা অন্তত ৭ বছর সরকারের নজর পড়েনি। দিঘিপাড়ায়, রাঘবপুরে ছিল বোর্ড। সেগুলি ধুয়ে মুছে সাদা। আদিবাসী ও মুসলিম প্রধান দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের শোলাকুড়ি যেন আর এক বামনগোলার মালডাঙা, মালদহের যে এলাকায় বেহাল রাস্তার জন্য সময়ে হাসপাতালে নিতে না পারায় মৃত্যু হয়েছে এক অসুস্থ মহিলার।
অভ্যেস ছাড়া, হজরতপুর থেকে রাঘবপুরের দিকে দেড়-দু’কিলোমিটার হাঁটলে এবড়োখেবড়ো মাটি, আর গর্ত বোজাতে টোটো চালকদের ফেলা ইটের টুকরোয় পা-কোমর টনটন করবে। এর মধ্যেই খালি পায়ে চলাচল করছেন গ্রামের বউ-বাচ্চারা। বর্ষায় গ্রামে ঢোকে না টোটো। অ্যাম্বুল্যান্সের শেষ স্টপ? হয় রাঘবপুর হাটখোলা অথবা হজরতপুর। শোলাকুড়ি গ্রামের কৃষক ফসিউর বলেন, ‘‘পুজোর আগে, বৃষ্টিতে এক হাঁটু কাদা ছিল রাস্তায়। হাফিজউদ্দিন সরকার এবং দেলোয়ার মিয়ার বাড়ির গর্ভবতী মহিলাদের কালদিঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা গ্রাম থেকে ঘাড়ে করে বয়ে আনি।’’ রাস্তার কারণেই বর্ষায় অলিখিত ছুটি পড়ে যায় অন্তত পাঁচটি গাঁয়ের পড়ুয়াদের। আরও প্রায় দু'কিলোমিটার এগোলে রাঘবপুর। রাস্তায় পড়বে মরাকুড়ি, খিজরাল, হাড়িপাড়া, ভুঁইমালিপাড়া। এই গ্রামের কৃষকেরা সরকারি কেন্দ্রে গিয়ে ধান দেন না। ফড়ে আসে পাড়ায়। পাটের সময় কুইন্টাল প্রতি সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে তা বিক্রি হয়।
মরাকুড়ি মসজিদের কাছে গেলে, চোখ কপালে উঠবেই। বর্ষার রাস্তায় চলা ট্রাক্টরের চাকার গর্তে এখনও জমে জল। তপন ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, আগে রাস্তাটি পাকা করতে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এক স্তর মোরামও পড়ে। কিন্তু পরে, কাজ হয়নি। করোনার পরে, ওই রাস্তাটিকে ঢালাই করার জন্য জেলা পরিষদ উদ্যোগী হয়। বোর্ড টাঙানো হয়, কিন্তু সে বারও পাথর পড়েনি বলে জানান মরাকুড়ির রাশিদুর রহমান। কেন হচ্ছে না রাস্তা? তপনের বিডিও ছুটিতে। জয়েন্ট বিডিও পরিমল কুমার দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’