প্রশ্ন: বিস্ফোরণের পরে ঝাঁপ বন্ধ সুজাপুরের অন্য প্লাস্টিকের কারখানারও। নিজস্ব চিত্র
সুজাপুরে পুরনো প্লাস্টিকের কারখানাগুলি নিয়ম মেনে চালানো হয় কিনা, বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছ থেকে কোনও মতে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হলেও কারখানা চালাতে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সার্টিফিকেট নেওয়া হয় না। কারখানায় মানা হয় না শ্রম আইনও। শিশু ও কিশোর শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এমন নানা অনিয়ম থাকলেও সেখানে সরকারি নজরদারির কোনও বালাই নেই বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে এগারোটা নাগাদ মালদহের সুজাপুরের ঝাবড়া গাইনপাড়ায় একটি প্লাস্টিকের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণে ৬ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। চার মহিলা ও দুই কিশোর-সহ আরও সাত জন শ্রমিক আহত হন। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে আসে রাজ্যের দুই সদস্যের এক ফরেন্সিক দল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ও ফরেন্সিক দলের দাবি, ওই কারখানায় থাকা প্লাস্টিক কাটিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিস্ফোরণ হয়েছিল।
প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ও সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ৫০টি প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের কারবারের গুদাম রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অন্তত ২০-২২টি কারখানা। সেগুলিতে রয়েছে কাটিং মেশিন।
জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ধরনের কারখানা চালাতে গেলে কেন্দ্রীয় অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রকের পোর্টাল থেকে 'উদ্যম' রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশন করা যায়। অভিযোগ, সুজাপুরের কারখানাগুলির বেশিরভাগেরই ওই রেজিস্ট্রেশন নেই। জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মানবেন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘রেজিস্ট্রেশন করার ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেনি।’’
ওই রকম কারখানা চালাতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগেরই তা নেই বলে দফতর সূত্রে খবর। আরও অভিযোগ, ওই কারখানাগুলিতে শ্রম আইন মানা হয় না। সামান্য মজুরিতে ১২-১৪ বছরের শিশু-কিশোরদের দিয়ে কাজ করানো হয়।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সুজাপুর পুরনো প্লাস্টিক ব্যবসায়ী ইউনিয়নের কর্মকর্তা মফিজুল শেখকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোনও সংগঠন এখন নেই। তা ছাড়া এই সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’’ মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের সংগঠনের কোনও শাখা নেই।’’ সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আরিফ শেখ বলেন, ‘‘ওই কারখানাগুলি আমাদের পঞ্চায়েত থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। কিন্তু বাকি বিষয় আমাদের জানা নেই।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’