তালগোল পাকিয়ে পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের কামরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
তখন বিকেল। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন ছাড়িয়ে বিকানের এক্সপ্রেস ছুটছিল। আর কিছু পরেই ধূপগুড়ি স্টেশনে পৌঁছনোর কথা ছিল সেটির। তা আর হল না। দোমহনী পার করেই বেলাইন হয়ে পড়ে একের পর এক বগি। একটি বগি আর একটির উপরে উঠে যায়। যাত্রীদের আতঙ্ক-চিৎকারে আশেপাশে থেকে ছুটে যান মানুষ। মূহূর্তেই সে দৃশ্যগুলির টুকরো টুকরো ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সমাজ মাধ্যমে। খবর পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তাঁর নির্দেশে সে পথে রওনা হয়ে যান শিলিগুড়ির প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব, কোচবিহারের তরুণ নেতা পার্থপ্রতিম রায়। প্রশাসনিক কর্তাব্যাক্তিরাও রওনা হন দোমহনীর পথে। জলপাইগুড়ি তো বটেই, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালবাজার শিলিগুড়ি থেকেও অ্যাম্বুলেন্স, ট্রমা অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, দমকল রওনা হয় দুর্ঘটনাস্থলের দিকে।
তৃণমূলের এই তৎপরতার মধ্যে ময়দানে নেমে পড়ে বিজেপিও। সন্ধ্যা সাড়়ে সাতটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্য বিধানসভার বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা ও ফালাকাটার বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ। দীপক জানান, বিজেপি নেতারাও গোটা জেলায় খোঁজ রাখছেন। বিজেপির দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ত তাঁর বার্তায় যাত্রীদের সুস্থতা কামনা করেন। যাত্রীদের উদ্ধার কাজে রেল আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি সংযোগে আছেন বলেও জানান। ততক্ষণে গৌতম দেব, পার্থপ্রতিম রায়রা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। সন্ধ্যা নাগাদ রওনা হন আলিপুরদুয়ার তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইকও। পার্থ জানান, ট্রেন যাত্রীদের উদ্ধার করে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের ২৫টি বাসকে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রয়োজনে অসমের যাত্রীদেরও বাড়ি পৌঁছে দেব আমরা।” গৌতম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ফোন পাওয়ার পরে রওনা হয়েছি। রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারাও পৌঁছে যান।”
দুর্ঘটনাস্থলে অবশ্য তৃণমূল-বিজেপি-বামেদের নিচুস্তরের সমস্ত কর্মীরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেন। সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ। জখম যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে ছিলেন তৃণমূলের সৈকত চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ মাহাতো, বিজেপির বাপি গোস্বামী, সিপিএমের তপন গঙ্গোপাধ্যায়রা। প্রাথমিকভাবে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ারের ৪৫ জন যাত্রী, কোচবিহারের ২০ জনের উপরে যাত্রী আটকে রয়েছেন। কোচবিহারের সিএমওএইচ সুকান্ত বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “আমরা চিকিৎসক দল নিয়ে এসেছি। যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করছি।”