কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ।
নির্বাচনে ভাল কাজের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব। দিনহাটায় বেনজির হারের কারণে কি তিরস্কৃত হবেন নিশীথ প্রামাণিক? মঙ্গলবার উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিজেপি-র অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে।
বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ৫৭ ভোটে বিজেপি জিতেছিল দিনহাটা কেন্দ্রে। জিতেছিলেন নিশীথ। লোকসভা নির্বাচনের মতো উত্তরবঙ্গে বিধানসভাতেও বিজেপি-র ফল মোটের উপর ভাল হয়েছিল। তারই ‘পুরস্কার’ পেয়েছিলেন দিনহাটায় জয়ী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ। তাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘নেকনজরে’ তিনি।
নিশীথ দিনহাটার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় সেখানে উপনির্বাচন হয়। মঙ্গলবার তারই ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, ৫৭ ভোটে নিশীথের কাছে হেরে যাওয়া উদয়ন গুহ জিতেছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯ ভোটে। নিশীথ তাঁর নিজের বুথে হেরেছেন। উদয়নের বিরুদ্ধে ভোটে-লড়া বিজেপি প্রার্থীও তাঁর বুথে হেরেছেন।
ভোটগণনার সকাল থেকেই নিশীথকে কোথাও দেখা যায়নি। সকাল থেকে তাঁর মোবাইলও বেজে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিশীথ যখন পুরস্কৃত হচ্ছেন, তখনই বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য ছিল কাজের খতিয়ানের নিরিখেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী। যদিও বাবুল বরাবর দাবি করেছেন, কাজের নিরিখে উপরের দিকেই ছিলেন। তাঁকে ‘অন্যায় ভাবে’ মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কালক্রমে বাবুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন।
কিন্তু দিনহাটায় এই বিপুল হারের পর নিশীথের নিজের দলও তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপি-র কোচবিহার জেলা সভাপতি মালতী রাভা মনে করিয়ে দিয়েছেন, নিশীথ এ বারের ভোটে তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি। দিনহাটার ফল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মালতী বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে ওঁর (নিশীথ) অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল।’’
যদিও নিশীথের পক্ষে বলার মতো যুক্তিও আছে। প্রথমত, উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদলেরই জয় হয়। যেমন ২০১৯ সালে বিজেপি রাজ্যে লোকসভা ভোটে নজিরবিহীন ফল করলেও তার পরে তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনেই হেরেছিল। যার মধ্যে দু’টি আসন (খড়্গপুর এবং কালিয়াগঞ্জ) ছিল বিজেপি-র দখলে।
কিন্তু তা বলে ৫৭ ভোটে জয় গিয়ে ঠেকবে ১ লাখ ৬৪ হাজারের হারে! সেটা মেনে নিতে পারছেন না বিজেপি-র কোচবিহার জেলার নেতৃত্ব। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানাচ্ছেন, দিনহাটার বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডল আগে থেকেই হেরে ছিলেন। তাঁকে কোনও ভাবেই সাহায্য করেননি নিশীথ। তবে পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, নিশীথ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘স্নেহধন্য’। ফলে তাঁর কপালে তিরস্কার যে জুটবেই, তা-ও হলফ করে বলা যায় না।
তবে এই হারের পর নিশীথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। যেমন জেলার পুরনো বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করে, নিশীথের কারণেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁদের ‘গুরুত্ব’ কমেছে। শীর্ষনেতৃত্ব নিশীথের কথাই মেনে চলেছেন। জেলায় নিশীথই দলের হয়ে শেষ কথা বলতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক পুরনো বিজেপি কর্মী যেমন বলেছেন, ‘‘অশোক মণ্ডল ভাল মানুষ। তাঁর হার আমাদের কাছে বেদনার। কিন্তু মানুষ হয়তো ভোটবাক্সে আমাদের নেতাদের ঔদ্ধত্যেরই জবাব দিতে চেয়েছেন। নেতৃত্ব সেটা বুঝলে ভাল। না বুঝলে দলের ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হবে।’’