জয়ের পর মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে ব্রজকিশোর গোস্বামী। ছবি টুইটার থেকে।
শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হল বিজেপি-র। ছ’মাস আগে নদিয়া জেলার এই বিধানসভা কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৮৭৮ ভোটে জিতেছিলেন রাণাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। কিন্তু সাংসদ হিসাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য শান্তিপুরের বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন তিনি। সে জন্যই উপনির্বাচন হয়েছিল শান্তিপুরে। সেই নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল, ৬৪ হাজার ৬৭৫ ভোটে সেখানে জিতেছেন তৃণমূলের প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী।
উপনির্বাচনে রাজ্যের চারটি বিধানসভা আসনেই পরাজিত বিজেপি। এর মধ্যে দিনহাটা এবং শান্তিপুর আসন হাতছাড়া হয়েছে তাঁদের। তবে শান্তিপুর হাতছাড়া হলেও ব্যবধানের নিরিখে এই কেন্দ্রেই বিজেপি-র ফল সবথেকে ভাল বলা যায়। দিনহাটায় এবং গোসাবায় শাসকদল জিতেছে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে। খড়দহেও ব্যবধান ৯৩ হাজারের বেশি। এই তিন কেন্দ্রেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর। ব্যতিক্রম কেবল শান্তিপুর। সেখানে জামানত রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী।
বিজেপি-র কবল থেকে শান্তিপুরকে মুক্ত করতে পেরে খুশি ব্রজকিশোর। কারণ, এই আসনেই তৃণমূলের লড়াই ছিল সবথেকে কঠিন। কঠিন লড়াই জিতে তিনি বলেছেন, ‘‘এই জয় মানুষের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয়।’’ পাশাপাশি এই জয়ের কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব-সহ স্থানীয় কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
মাত্র ছ’মাসের মধ্যে বিজেপি-র হার নিয়ে ব্রজকিশোর বলেছেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থীকে মানুষ আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু তিনি জিতেও মানুষের আশীর্বাদকে পায়ে ঠেলেছেন। শান্তিপুরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মানুষ তার জবাব দিয়েছেন।’’ সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বদলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে মত ব্রজকিশোরের। গত বার এই কেন্দ্রে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের একটা বড় অংশ গিয়েছিল বিজেপি-র পক্ষে। ফল দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে গত বারের তুলনায় মতুয়া ভোট কমেছে বিজেপি-র। এ ব্যাপারে ব্রজকিশোর বলেছেন, ‘‘বিজেপি মতুয়াদের ভুল বুঝিয়ে ভোট নিয়েছিল। আমরা সেই ভুল ভাঙাতে কিছুটা সফল হয়েছি। কিন্তু মতুয়ারা কোনও দিনই মমতাকে দূরে ঠেলেননি। তা হলে ২১৩ আসনে তৃণমূল জিতত না। মমতা মতুয়াদের জন্য যা করেছেন তা তাঁরাও জানেন।’’
গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।
শতাংশের হিসাবেও শান্তিপুরে কমেছে বিজেপি-র ভোট। শান্তিপুরে ৪৯.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন জগন্নাথ। এ বারের বিজেপি প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস পেয়েছেন মাত্র ২৩.২২ শতাংশ ভোট। তৃণমূলের ভোট ৪২.৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪.৮৯ শতাংশ। শান্তিপুরে গত নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ঋজু ঘোষাল পেয়েছিলেন ৪.৪৮ শতাংশ ভোট। এ বার সিপিএম এবং কংগ্রেস আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল শান্তিপুরে। সিপিএম প্রার্থী সৌমেন মাহাত পেয়েছেন ১৯.৫৭ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী রাজু পাল পেয়েছেন ১.৪১ শতাংশ।