সাক্ষাৎ: মনোরঞ্জনকে দেখতে আসেন মন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে। নিজস্ব চিত্র।
আরএসপি দিয়ে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ঘাসফুলে যোগদান। তার পর দ্রুত উত্থান। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তার পর জেলা পরিষদে দুই নম্বর জায়গা। অর্থাৎ, সহকারী সভাধিপতি। এখন আবার আসন্ন বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম দাবিদার।
এক কথায় তিনিই মনোরঞ্জন দে। জেলায় যিনি মনা নামেই বেশি পরিচিত।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিলিগুড়ি থেকে ফেরার পথে মালবাজারে আক্রান্ত হন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নেমেছিলেন মনোরঞ্জন। পিছন থেকে হঠাৎ উদয় হয় একটি সাদা গাড়ি। কিছু বোঝার আগে পরপর গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। বাঁ পায়ে গুলি লাগে মনোরঞ্জনের। তিনি সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, তিন রাউন্ড গুলি চলেছিল। এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাঁর দ্রুত উত্থানের মধ্যেই কি লুকিয়ে আছে এই হামলার রহস্য? বস্তুত, তৃণমূলের অন্দরে এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করেছেন মনোরঞ্জনের ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের কথায়, আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের রাজনৈতিক জমি দখল করতে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীদের আক্রমণের কেন্দ্রে মনা। মনাকে দাবিয়ে রাখতেই তাঁর উপর এই হামলা। তৃণমূল জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, “ডিসেম্বর থেকে তৃণমূলের উপর হামলা শুরু হবে বলে বিজেপির শীর্ষ নেতারাই হুমকি দিয়েছিলেন। মনার উপর এই হামলা যে বিজেপির পরিকল্পিত, তা স্পষ্ট।”
বিরোধীরা অবশ্য পাল্টা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষই যাঁর বিরুদ্ধে ধরে ভুরি ভুরি অভিযোগ তুলে আসছেন, তাঁকে নিয়ে অন্য কারও কিছু করার দরকার নেই। বরং নিজের কৃতকর্মের জন্য দলের মধ্যে তৈরি হওয়া অসন্তোষেরই শিকার হয়েছেন মনা।
বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার অভিযোগ, “বহু বেআইনি কাজ ও অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মনোরঞ্জন। যা নিয়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, তাঁর দলের অন্দরেও ক্ষোভ বাড়ছিল। তৃণমূলের অন্দরে অনেকের সঙ্গে মনার ঠান্ডা লড়াইও চলছিল। এটা তারই ফল।”
বাম আমলে আরএসপি-র টিকিটে জয়ী হয়ে পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন মনা। রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রথমে আলিপুরদুয়ার-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পরে জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি হন তিনি। সেই বাম আমল থেকেই বিরোধীরা বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ তুলে আসছেন। এ দিন সেই কথাই মনে করিয়ে দিলেন গঙ্গাপ্রসাদ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে এর আগে খুব বেশি রাজনৈতিক হানাহানির ঘটনা দেখা যেত না। কিন্তু গত কয়েক বছরে অবস্থাটা বদলে গিয়েছে। এর পিছনে কারণ কী, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সব স্তরে। তবে একটি অংশের মতে, বিরোধীরা এখানে শক্তিশালী হওয়ায় সংঘর্ষ বেড়েছে। মালবাজারে মনোরঞ্জনের উপর হামলার পিছনেও তাই রাজনৈতিক এলাকা দখলের লড়াই লুকিয়ে রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। স্থানীয়রা আরও একটা কারণে শঙ্কিত। তাঁদের প্রশ্ন, ভোট যত এগিয়ে আসবে, এই লড়াই তত বাড়তে থাকবে না তো?