পঞ্চাননবর্মা বিদ্যালয়ে অবস্থানরত শিক্ষাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে। ছবিঃ মুক্তাঙ্কন বর্মণ।
পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যুযুধান’ দুই পক্ষের অভিযোগের তদন্তে নামল কোচবিহার জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের ডিএসপি (সদর) চন্দন দাস ওই অভিযোগের তদন্তে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কোচবিহার কোতোয়ালি থানার আইসি তপন পাল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এসসি, এসটি ধারায় অভিযোগের তদন্ত ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিককে করতে হয়। ওই সংক্রান্ত দু’টি অভিযোগের তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের ডিএসপি এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ডিএসপি জানান, দু’টি অভিযোগেরই তদন্ত করা হচ্ছে।
কিছু দিন ধরেই উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের ‘বিরোধ’ ঘিরে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোরগোল চলছে। ১০ মে একাধিক অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়্রের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সাফেলিকে বরখাস্ত করেন উপাচার্য নিখিলেশ রায়। অন্য এক শিক্ষককে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও চলছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রায় দু’মাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ‘বরখাস্ত’ রেজিস্ট্রার। উপাচার্য পুলিশের কাছে দায়ের অভিযোগে জানান, রেজিস্ট্রার ও তাঁর সমর্থক, বহিরাগতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেন। সিল, তালা ভেঙে অফিসে ঢোকেন। উপাচার্যকে ‘জাতি’(রাজবংশী তুলেও অসম্মান করা হয়। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্থার অভিযোগ জানান সেখানকার এক শিক্ষক তথা তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের নেতা সাবলু বর্মণ। যিনি ‘বরখাস্ত’ রেজিস্ট্রারের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। তিনিও লিখিত অভিযোগে ‘জাতি’ (রাজবংশী) তুলে কটূক্তির নালিশ জানান। রেজিস্ট্ররের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর সময় ওই ঘটনা হয় বলে অভিযোগ জানান তিনি। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ওই দু’টি অভিযোগে এসসি, এসটি ধারা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিএসপি চন্দন দাসকে। মঙ্গলবার ‘বরখাস্ত’ রেজিস্ট্রারও কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় আরও একটি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। উপাচার্য ও তাঁর সহযোগী লোকজনদের বিরুদ্ধে মানসিক, শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অভিযোগেও মামলা করে তদন্ত হচ্ছে। এ দিন ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার, কোতোয়ালি থানার এক আধিকারিকও বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। অভিযোগকারী-সহ অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। এ দিন অবশ্য উপাচার্যের বক্তব্য মেলেনি। তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে।
তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েবকুপার নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবলু বর্মণ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম না। ফোনে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে।” আব্দুল কাদের সাফেলি বলেন, ‘‘পুলিশ এসেছিল। কথা হয়েছে।’’
এ দিন মাথাভাঙার পঞ্চানন স্মৃতি ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে পূন্যভূমি খলিসামারি পঞ্চানন বর্মা মেমোরিয়াল অ্যান্ড ডেভলমেন্ট ট্রাস্ট। ট্রাস্টের সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলমালের আবহে আমরা উদ্বিগ্ন। দ্রুত অভ্যন্তরীণ গোলমাল মিটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ দরকার।”