রামনবমীর শোভাযাত্রা কোচবিহারের রাস্তায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দে
কোথাও অভিযোগ উঠল ডিজে বাজিয়ে মিছিল করার। কোথাও আবার শোভাযাত্রার অনুমতি না থাকায় পুলিশের সঙ্গে সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়লেন মিছিলে যোগদানকারীরা। সব মিলিয়ে রামনবমীর মিছিল ঘিরে বৃহস্পতিবার দিনভর সরগরম রইল দুই জেলা। পাশাপাশি, এই মিছিলকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জনসংযোগে ফাঁক রাখল না তৃণমূল-বিজেপি কোনও পক্ষই।
এ দিন, তুফানগঞ্জে রামনবমীর মিছিল আটকে দেওয়ায় বক্সিরহাট পুলিশের সঙ্গে মিছিলে যোগদানকারীদের বচসা হয় বলে অভিযোগ। যার জেরে, তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের শালবাড়ি ১ এলাকায় উত্তেজনার ছড়ায়। পুলিশের বক্তব্য, ওই এলাকায় মিছিলের অনুমতি ছিল না। মিছিলের আয়োজক বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উত্তরবঙ্গের এক নেতা প্রসেনজিৎ সরকার যদিও বলেন, ‘‘শালবাড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের পাশ থেকে বৃহস্পতিবার শোভাযাত্রা করা হবে ঠিক ছিল। পুলিশ অযথা শোভাযাত্রা আটকে দেয়। আমাদের নিদিষ্ট রাস্তায় পুলিশ শোভাযাত্রা করতে দেয়নি। তাই পরে, সংক্ষিপ্ত আকারে মিছিল করা হয়।’’ সে প্রসঙ্গে এসডিপিও (তুফানগঞ্জ) জ্যাম ইয়াং জিম্বা বলেন, ‘‘এ দিন শোভাযাত্রার অনুমতি ছিল না। তা হলেও, মিছিলে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।’’
ডিজে বাজানোর অভিযোগে আলিপুরদুয়ারে রামনবমীর শোভাযাত্রা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় এ দিন। অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে রামনবমী উদ্যাপন সমিতি আয়োজিত শোভাযাত্রায় গাড়িতে জেনারেটর-সহ বক্স বাজানোয় পুলিশ গাড়ি আটকে দেয়। আলিপুরদুয়ার কোর্ট-মোড় এলাকায় পুলিশ সে গাড়ি আটকালে, শোভাযাত্রায় যোগদানকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয় বলেও অভিযোগ। প্রায় ১৫ মিনিট পরে, পুলিশ গাড়ি ছেড়ে দিলে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কাজ করেছি।’’
এ দিন কোচবিহার শহরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকে বড় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে, মিহির গোস্বামী ও মালতী রাভা। অভিযোগ, মিছিলের সামনে-পিছনে পুলিশ থাকলেও সেখানে ডিজে বাজানো হয়। যদিও আয়োজকেরা দাবি করেছেন, ডিজে বক্স থাকলেও তা মিছিলে বাজানো হয়নি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিশীথ বলেন, ‘‘এই রামনবমীর অনুষ্ঠান গোটা দেশে পালিত হচ্ছে। রাজনীতির রং ভুলে ভুলে বহু মানুষ মিছিলে যোগ দিয়েছেন। এটা আমাদের পরম্পরা।’’
কোচবিহার শহরের স্টেশন মোড়ে রামনবমী উপলক্ষে তৃণমূলের পক্ষ থেকে নারায়ণ সেবার আয়োজন হয়। পাশাপাশি, মাথাভাঙা, ফলিমারি-সহ একাধিক জায়গায় মিছিল করে তৃণমূল। মাথাভাঙায় দলের রামনবমীর মিছিলে যোগ দেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। তিনি বলেন, ‘‘রামনবমী বিজেপির একার নয়। প্রত্যেকের উৎসব। আমরা প্রত্যেক বার পালন করি। এ বারও করেছি।’’ মিছিলের জেরে, এ দিন সকালে কোচবিহারের সুনীতি রোড ও সংলগ্ন এলাকায় যানজটও হয় কিছুক্ষণের জন্য।
আলিপুরদুয়ার শহরে কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজকুমার ওরাওঁ এবং জেলা বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা করা হয়। কালচিনি ব্লকের জয়গাঁ হিন্দু জাগরণ সমিতির পক্ষ থেকেও রামনবমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা হয়। রামের পুজো করেন জেডিএ চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। তৃণমূল নেতারাও ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, হ্যামিলটনগঞ্জ এবং হাসিমারাতেও শোভাযাত্রা হয়। সেখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি, পা মেলাতে দেখা যায় বিজেপি বিধায়ক বিশাল লামাকে।