Balurghat

চত্বরেই ‘ভক্তিকেন্দ্র’, তা জানে না ফাঁড়ির পুলিশ!

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে মাতৃযান পরিষেবায় যুক্ত ১৯টি অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে তার ঢের বেশি অ্যাম্বুলেন্স রোজ পার্কিং করে রাতে।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৫
Share:

বালুরঘাটে গভীর রাতের হাসপাতালে এম্বুলেন্স পরিষেবা চত্বরে চলছে পুজো বাজছে ডিজে। চলছে আড্ডা। ছবি অমিত মোহান্ত।

রাত পৌনে ১২টা। শ্রাবণের শেষ সোমবার। ভোলেবাবার মহিমায় পাঞ্জাবি গানের ডিজে ‘শ্রাবণের ধারার মতো’ ভক্তকুলের হুল্লোড় হয়ে বইছে। হাসপাতালের দূর-দূর পর্যন্ত। বটতলার পাশে আধো অন্ধকারে চালা-মন্দির, ডেকরেটর দিয়ে অস্থায়ী মণ্ডপ, কভার পরানো চেয়ার-টেবিল, পানীয়— সব আয়োজন যথাযথ। আর ওই 'ভক্তিকেন্দ্র' থেকে ১০০ মিটারের মধ্যেই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড। মনোরোগ ওয়ার্ড খুব বেশি হলে ৮০ মিটার। হাসপাতাল চত্বরের ভেতরেই থাকা পুলিশ ফাঁড়ির দূরত্ব ১০০ মিটার। আরজি করের ঘটনার পরে বালুরঘাটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালের ভেতরে রাতের নিরাপত্তার এই ছবিই ধরা পড়ল।

Advertisement

গভীর রাতে হাসপাতালের ভিতরে এরা কারা? 'শক্তিশালী' পুলিশ ফাঁড়ির চোখে ধুলো দিয়ে এরা কী ভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে? এ সব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎই হাজির সাদা পোশাকের এক কনস্টেবল। বললেন, ‘‘আপনারা কারা? কী করছেন এখানে? কী আছে ব্যাগে?’’ পরিচয় জানিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা গেল, ‘‘আমাদের পরিচয় তো জানলেন, হাসপাতালে এত রাতে কারা ডিজে বাজাচ্ছে, সেটা খোঁজ করেছেন কি? কনস্টেবলের জবাব, ‘‘ও-দিকেই তো যাচ্ছিলাম। পথে আপনাদের দেখে দাঁড়ালাম।’’

অর্থাৎ, তিনি বা তাঁর সহকর্মী কেউ রাত পৌনে ১২টার আগে পর্যন্ত বটতলার পাশের এলাকা দেখেননি। আগে জানতেনও না রোজ বালুরঘাট হাসপাতালের ওই অ্যাম্বুল্যান্স-ঠেকে কোন বহিরাগতদের যাতায়াত? কেন ওই কেন্দ্রের আশপাশে গাঁজার গন্ধ বেরোয়, মদের খালি বোতল পড়ে থাকে? যদিও হাসপাতালের অনেকেই এগুলো জানেন বলেই জানা গেল। তাহলে কি কেবল ফাঁড়ির পুলিশই এগুলো জানছে না? জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের ফাঁড়িটি বেশ শক্তিশালী। ফোর্স বাড়ানা দরকার কিনা দেখছি।’’ ওই পুলিশকর্মীকে দেখা গেল গিয়ে ভক্তদের গিয়ে বিষয়টি বলতে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিজে থেমে গেল। তবে ভিড় তেমন হালকা হল না।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে মাতৃযান পরিষেবায় যুক্ত ১৯টি অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে তার ঢের বেশি অ্যাম্বুলেন্স রোজ পার্কিং করে রাতে। জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, আগে আইএনটিটিইউসির একটি ইউনিট হাসপাতাল দেখত। সম্প্রতি এক আইএনটিটিউসি নেতা মারা যান। অন্য আর এক নেতার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আছে। তিনি ‘আত্মগোপন’ করে রয়েছেন। নতুন ইউনিট গড়তে পারেনি শাসক দল। সেই সুযোগেই কি স্থানীয় কেউ হাসপাতালের ভিতরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে? জেলা আইএনটিটিইউসির এক নেতা নামিজুর রহমান বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে এক নতুন যুবকের প্রভাব সম্পর্কে আমিও শুনছি। আমাদের অনুমোদন নেই। তবে শীঘ্রই কমিটি গড়ব।’’ হাসপাতালের ভিতরে অনেক জায়গাতেই নাকি ওই যুবকের অবাধ যাতায়াত! ধাপে ধাপে আর একটি আরজি কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে না তো জেলা হাসপাতাল? হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগ বলেন, ‘‘এই সমস্যা সম্পর্কে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনকে আগেও জানিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement