দু’টি গ্রামের মাঝে লোহার তৈরি এই সেতু ঘিরেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
রক্তি নদীর উপর হলুদ রঙা এক সেতু। দু’টি গ্রামের মাঝে লোহার তৈরি এই সামান্য সেতু ঘিরেই হঠাৎ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে মাটিগাড়ার পাথরঘাটা এলাকায়। কারণ, আশপাশের কেউই জানেন না, এই সেতু কে বা কারা তৈরি করেছিল এবং কী কারণে তৈরি হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া হুঁশিয়ারির পর জমি থেকে বেআইনি নির্মাণ, সেতু, নদী থেকে বালি পাথর তোলা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। শুক্রবার পাথরঘাটার ফুলবাড়িপতন এলাকায় এই লোহার সেতুর হদিশ মিলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতুটি প্রায় ছ’বছরের পুরনো। তবে কারা তৈরি করেছিল তা তাঁরা বলতে পারেননি। খবর পেয়ে মাটিগাড়া থানা, বিডিও দফতর থেকে দুপুরেই অফিসারেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে খোঁজখবর শুরু করেন। প্রায় ১০০ ফুট লম্বা সেতুটি দু’টি গ্রামকে জুড়লেও এটির ব্যাপারে আর কোনও কিছুই জানা যায়নি।
সেতুটি পুরোপুরি বেআইনি কি না তাও রাত অবধি প্রশাসন জানতে পারেনি। এই অবস্থায় সেতু-রহস্য সমাধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নবলম। তিনি বলেন, ‘‘সেতুটি সরকারি তালিকায় নেই ঠিকই। তবে অন্য কোনও প্রকল্পের অধীনে রয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে। বেআইনি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হূবে।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি জমি মাফিয়া ফুলবাড়িতে বেআইনি একটি লোহার সেতু তৈরি করেছিল। প্রশাসনের তরফে খবর পেয়ে তা ভেঙে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে সেই উল্লেখ করে শিলিগুড়ি তো বটেই, অন্য এলাকায় তা বন্ধ করার কথা বলেন। পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারেরা জানান, পাথরঘাটার রক্তি নদীর উপর এই ‘রহস্যময়’ সেতুটি হলুদ রংও করা হয়েছে। একপাশে চা বাগান ঘেরা ফুলবাড়িপতন গ্রাম। অন্যদিকে কার্শিয়াঙের পানিকুমারী গ্রাম। দুই গ্রামের বাসিন্দারা সেতু দিয়ে এপার ওপার করেন।
পুলিশ একটি নির্মাণ সংস্থার নাম পেয়েছে। তাদের দফতর বা লোকজনের খোঁজ শুরু করেছে। আদৌও এই নামে কোনও সংস্থা রয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, এলাকার জমির দাম বাড়াতেই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে কি না তাও দেখা হচ্ছে। গ্রামবাসীরা অবশ্য কিছু বলতে নারাজ। এলাকাটি আদিবাসী প্রভাবিত। তাঁরা শুধু বলেছেন, ‘‘সেতুটি না থাকলে বহু রাস্তা ঘুরে দুই গ্রামের মানুষকে আসতে হবে।’’
তদন্তকারীরা মনে করেছেন, নিছক গ্রামের বাসিন্দারা তৈরি করলে তা বাঁশের বা কাঠের সেতু হত। লোহার রড, লোহার চাদর দিয়ে সেতুটি খরচ করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে, বোঝাই যাচ্ছে কোনও উদ্দেশ্যেই সেতুটি তৈরি হয়েছিল। আর সেটা কে বা কারা করল সেটাই দেখা হচ্ছে।