ফালাকাটা থানায় বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
পূরবী কর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভের পারদ ক্রমশ চড়ছে ফালাকাটাতে। অভিযোগ দায়ের হওয়ার এগারো দিন বাদেও পুলিশ কেন মৃত গৃহবধূর স্বামী সহ ও দুই ছেলে এবং পুত্রবধূকে গ্রেফতার করতে পারেনি, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
শুক্রবার গৃহবধূকে খুনের ঘটনা নিয়ে সিপিএম-এর মহিলা সমিতি কয়েকশো কর্মী সমর্থকদের মিছিল বের হয় শহরে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে এলাকা জুড়ে বড় ধরনের হুমকি দিয়ে আসেন তাঁরা। ফালাকাটা থানার আইসি ধ্রুব প্রধান অবশ্য বিষয়টি মেনে নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা পাঁচ অভিযুক্তকে খুঁজে বের করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে তাঁদের হদিস মিলছে না।’’
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ২৯ মার্চ ভোরে অরবিন্দপাড়ার এক কাপড় ব্যবসায়ীর স্ত্রীর দগ্ধ দেহ বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে উদ্ধার হয়েছিল। গায়ে আগুন লাগিয়ে যে ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেননি তা দেহটি দেখেই সন্দেহ করেছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, কেউ নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে ছাদের এক পাশে চুপ করে বসে থাকতে পারে না, কিন্তু পূরবীদেবীর দেহ বসে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বাঁচার জন্য তিনি চিৎকার পর্যন্ত করেননি। শ্বাসরোধ করে কারও মৃত্যু হলে যে ভাবে জিভ বেরিয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রেও সেই ভাবে তাঁর জিভ বাইরে বেরিয়ে ছিল। পিঠ পোড়েনি এবং পায়ের নীচের পাতা পোড়েনি। তা দেখে লোকজন সন্দেহ করেন, ঘটনাটি নিছক আত্মহত্যার নয়।
সম্প্রতি ওই পরিবারের পরিচারিকা সে দিনের ঘটনার বিবরণ দেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে। সেই বিবরণ ভয়েস রেকর্ড করে হোয়াটস অ্যাপে-র মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় এলাকায়। তাতেই উত্তেজনা ছড়ায় স্থানীয় এলাকায়। মিছিলও করেন বাসিন্দারা। সিপিএম নেতা নিতাইকৃষ্ণ পালের কথায়, ‘‘ঘটনার পর প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলল, আজও পুলিশ কাউকে কেন গ্রেফতার করতে পারল না তা খুবই সন্দেহজনক। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তুষের আগুনের মতো জ্বলছে। পুলিশ হাত গুটিয়ে থাকলে তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’
তৃণমূলের পক্ষেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে। দলের ছাত্র নেতা গদাই দে-র কথায়, ‘‘ফালাকাটার সর্ব স্তরের মানুষ চাইছে অভিযুক্তরা গ্রেফতার হোক। তার জন্য আমরা এক মঞ্চের তলায় আন্দোলন চালাচ্ছি। অভিযুক্তেরা সকলে গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’ অরবিন্দপাড়ার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ভবতোষ সাহার কথায়, ‘‘এই নারকীয় ঘটনা কোনও ভাবে মানা যায় না। নাগরিক কমিটির মহা মিছিল হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে পথ অবরোধ থেকে শুরু করে গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে আন্দোলন চলবে।’’
ভ্রম সংশোধন। ১৭ এপ্রিল, শুক্রবার উত্তরবঙ্গ সংস্করণে প্রকাশিত ‘খুনের কথা ছড়াচ্ছে ফোনে, অধরা দোষীরা’ শীর্ষক খবরে ভুলবশত লেখা হয়েছে, ফালাকাটা সুভাষ গার্লস হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা সন্ধ্যা বন্দ্যোপাধ্যায় হোয়াটস অ্যাপে তুলে দেওয়ার বিষয়টি জানতেন। তিনি তা জানতেন না। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য দুঃখিত।