হাইকোর্টের রায় স্বাগত উত্তরবঙ্গে

রাজ্য প্রশাসন এক নির্দেশে দশমীর দিন রাত দশটা পর্যন্ত বিসর্জনের জন্য বেঁধে দেয় এবং একাদশীর দিন বিসর্জন পুরো বন্ধ রাখে। একে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হলে বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত প্রশাসনের নির্দেশটি খারিজ করে দেয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০৪
Share:

মহরমের দিনে বিসর্জন হওয়া নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের কথায়, দুই সম্প্রদায় পাশাপাশি থেকে উৎসব-অনুষ্ঠান পালনের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। এ বারেও সব শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটে যাবে।

Advertisement

এ বারে দশমীর পরদিনই মহরম। রাজ্য প্রশাসন এক নির্দেশে দশমীর দিন রাত দশটা পর্যন্ত বিসর্জনের জন্য বেঁধে দেয় এবং একাদশীর দিন বিসর্জন পুরো বন্ধ রাখে। একে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হলে বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত প্রশাসনের নির্দেশটি খারিজ করে দেয়। তাদের বক্তব্য, রোজই রাত বারোটা অবধি বিসর্জন দেওয়া যাবে। এমনকী, মহরমের দিনও। এই সব ক’দিন শান্তিশৃঙ্খলা বজার রাখার দায়িত্ব রাজ্যের। হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে রাজ্য।

উত্তরবঙ্গ মানুষ অবশ্য এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের জেলা ইমাম প্রতিনিধি মহম্মদ মফিজুদ্দিন থেকে রায়গঞ্জের শাস্ত্রী সঙ্ঘ পুজো কমিটির সম্পাদক মনোজ প্রধান, সকলেই বলছেন, কোনও সমস্যা নেই। মফিজুদ্দিনের কথায়, ‘‘মহরমের দিন প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশকে জেলার সমস্ত ইমাম ও মোয়াজ্জেম স্বাগত জানিয়েছেন। সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে এর থেকে ভাল কোনও নির্দেশ হতে পারে না।’’ মনোজবাবু বলছেন, ‘‘দীর্ঘকাল ধরে বাঙালি সমাজে শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন হিন্দু ও মুসলিমরা সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছেন। নজরুল ইসলাম স্বয়ং শ্যামাসঙ্গীত-সহ হিন্দুদের বিভিন্ন দেবদেবীকে নিয়ে ভক্তিমূলক গান লিখেছেন। তা হলে বিসর্জন ও মহরম একই দিনে হলে ক্ষতি কোথায়?’’

Advertisement

একই সুর মালদহেও। উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম নূর বলেন, “সম্প্রীতির জেলা মালদহ। পুজো কিংবা ইদ আমরা সকলে মিলে পালন করি। আশা করছি বিসর্জন কিংবা মহারমের শোভাযাত্রা একসঙ্গে হলে সম্প্রীতি নষ্ট হবে না।” মালদহ শহর মুসলিম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, “শহরে মহরমের শোভাযাত্রায় কখনও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ আর কোন মহরম কমিটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে? তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তাদের পাঁচ বছরের জন্য লাঠিখেলা থেকে বহিষ্কার করব।” উল্টো দিকে, হাটখোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আমরা সকলে একসঙ্গে বসবাস করছি। তা হলে একসঙ্গে কেন বিসর্জন আর মহরমের শোভাযাত্রা করতে পারব না?”

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর বা কোচবিহার জেলাতেও কিন্তু একই কথা বলেছেন বেশির ভাগ মানুষ। ইসলামপুরের ফেমাস ক্লাবের প্রতি বছরই বড় তাজিয়ে বের করে। ক্লাবের অন্যতম সদস্য হাফিজ রেজা বলেন, ইসলামপুরের মানুষের মতে কোন ভেদাভেদ নেই। একসঙ্গে যদি দু’টি অনুষ্ঠান হয়, কোন সমস্যায় হবে না। প্রশাসন যে ভাবে করতে বলবে, সেই ভাবেই সব হবে।’’ ইসলামপুর পুজো সমন্বয় কমিটির সম্পাদক কৌশিক গুন, আদর্শ সংঘের অন্যতম সদস্য রাজ সাহানিরাও বলছেন, ‘‘দশমীতে মিলনমেলায় যেমন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক উপস্থিত থাকেন, মহরম দেখতে আমরাও যাই।’’

ভাসান নিয়ে আদালতের রায়ের বিষয়ে কোচবিহারের বাজারের মাঠ ইউনাইটেড পুজো কমিটির সম্পাদক সব্যসাচী দেবনাথ বলেন, “ভাসান ও মহরম একসঙ্গে হলে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।” সাবেক ছিটমহল মশালডাঙার মসজিদ কমিদ সদস্য জয়নাল আবেদিন বলেন, “মহরম একটি দুঃখের দিন। এ দিন আমাদের এ দিকে সবাই বাড়িতে থাকি। ভাসানে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement