অপেক্ষা: আলু নিতে সরকারি স্টলে লাইন। মালদহে। ছবি: অভিজিৎ সাহা
সদর রাস্তার পাশে একফালি ফাঁকা জায়গা। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পর পর রাখা রয়েছে হরেক রঙের বাজারের থলে। ইট, পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা থলেগুলি। এক জন জানালেন, বাজারে চড়া দর। সরকারি স্টলে কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে আলু। এটা তারই লাইন। শুক্রবার সকালে মালদহের ইংরেজবাজার এলাকার দৃশ্য।
মহিলা থানার সামনে ওই দীর্ঘ সারিতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধ এক মহিলা। তিনি জানান, বাজারে ৪৫ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হচ্ছে। সরকারি স্টলে তা ২৫ টাকা। তিন কেজি আলু কিনলে ৬০ টাকা লাভ। তিনি বলেন, "সাতসকালে তাই বাড়ির কাজ ফেলে আলু কিনতে সরকারি স্টলে ছুটে এসেছি। রাস্তায় থলে রেখে লাইন দিয়েছি।”
শুধু থানা চত্বরই নয়, মালদহ জেলা জুড়েই আলু কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ছে সরকারি স্টলগুলিতে। খাবারের পাতে আলু রাখতে লাইন দিচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় প্রতিদিন ১৫টি কাউন্টার থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু দেওয়া হচ্ছে। ইংরেজবাজার শহরের মকদমপুর, ঝলঝলিয়া, রথবাড়ি, মহিলা থানা সংলগ্ন এলাকায় স্টল খোলা হয়েছে। জেলার এই কাউন্টারগুলি থেকে দৈনিক আলু বিকোচ্ছে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ কুইন্টাল করে। মাস খানেক ধরেই আলু বিক্রি চলছে জেলায়। এখনও পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার কুইন্টাল আলু বিক্রি হয়েছে বলে জানান কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা। ওই দফতরের মালদহের এক কর্তা অনুপম মৈত্র এ দিন বলেন, ‘‘স্টলের সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম দিকে, পূর্ব বর্ধমান থেকে ২০ টন করে আলু কিনতে হচ্ছিল। মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা এখন ৫০ টন করে আলু কিনছি। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আপাতত আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
আলু কিনতে কেন সাধারণ মানুষ সরকারি স্টলে ছুটছেন? মালদহের পাইকারি বাজারে পাঁচ দিন আগে আলুর দর ছিল ৩৫ টাকা কেজি। এখন ৩৮ টাকা। তার প্রভাব পড়ছে খুচরো বাজারেও। সেখানে প্রায় ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন দফতর হিমঘরগুলি থেকে ২২ টাকা কেজিতে আলু কিনে ২৫ টাকায় বিক্রি করছে। সে ক্ষেত্রে বাজারে কেন চড়া দামে বিকোচ্ছে আলু? মালদহের বিজেপির কিসান মোর্চার সভাপতি দিলীপ রায় বলেন, “হিমঘরগুলিতে কিছু ব্যবসায়ী আলু মজুত করে রেখে দিচ্ছেন। বাজারে কৃত্রিম ভাবে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য আলুর দাম বাড়ছে। হিমঘরগুলিতে শাসক দলের নেতারা যুক্ত। তাই প্রশাসন চুপ করে রয়েছে।” তৃণমূলের মালদহের মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, “কেন্দ্রের নয়া আইনের কুফল আমরা পাচ্ছি। অত্যাবশ্যক পণ্য মজুতে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। সেই দলের নেতাদের মুখে কালোবাজারির অভিযোগ মানায় না।’’