মাংসের দোকানে চিঠির ওজন! —নিজস্ব চিত্র।
চিঠিপত্র ওজন করারই যন্ত্র নেই ডাকঘরে। মানুষজন চিঠি নিয়ে আসেন। সেখানে কত টাকার টিকিট সাঁটাতে হবে, তা জানার জন্য চিঠি ওজন করা জরুরি। কিন্তু ওজন করানোর কথা বললেই দেখিয়ে দেওয়া হয় পাশের একটি মাংসের দোকান। ওজন করাতে হলে নাকি ওখানেই যেতে হবে! যাঁরা প্রায়ই আসেন, তাঁরা জানেন। তাঁরা ওই মাংসের দোকানে গিয়েই চিঠি ওজন করান। যে যন্ত্রে মাংসের ওজন হয়, সেই যন্ত্রেই চিঠিপত্রের ওজন করা হয় সেখানে। আর যাঁরা নতুন এসেছেন, জানতে না-পেরে বা়ড়ি ফিরে যান তাঁরা। গত ছ’বছর ধরে এই ব্যবস্থাই চলে আসছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাব পোস্ট অফিসটিতে।
ডাকঘরটি ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মৈত্রী চক্র ক্লাব লাগোয়া। ঠিক তার পাশেই একটি মাংসের দোকান রয়েছে। সকাল ১০টার মধ্যে মাংস বিক্রি করে শুধুমাত্র ডাকঘরের চিঠি ওজন করার জন্যই দোকান খুলে রাখেন দোকানদার মহাদেব মালি। গ্রাহকেরা জানাচ্ছেন, চিঠি ওজন করার জন্য তিনি অবশ্য কারও কাছ থেকে টাকা নেন না। বিনামূল্যে চিঠিপত্র ওজন করিয়ে দেন দোকানদার মহাদেব। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ৬টায় দোকান খুলি। ১০টার মধ্যে মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়। অল্প যেটুকু পড়ে থাকে, তা বিক্রি করতে বেলা ১২টা বেজেই যায়। ওই সময়ে পোস্ট অফিসের আসা কিছু মানুষ আমার দোকানেই আসেন চিঠিপত্র ওজন করাতে। সকলেই আমার পরিচিত। আমি তাঁদের চিঠি ওজন করিয়ে দিই। সেই মতো ওঁরা টিকিট লাগান।’’
স্থানীয় বাসিন্দা পার্থ চাকী বলেন, ‘‘আমার পরিবারে একটা অনুষ্ঠান ছিল। আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর জন্য পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। চিঠিতে কত টাকার টিকিট লাগাতে হবে, তা জানার জন্য আমাকে দু’দিন ঘুরতে হয়েছে। শেষমেশ মহাদেবদাই সেই সব চিঠি ওজন করিয়ে দেন। তার পরেই চিঠি পাঠাতে পেরেছি। এর জন্য মাঝেমধ্যে অফিশিয়াল ডকুমেন্ট পাঠাতেও খুব অসুবিধা হয়। মহাদেবদাই আমাদের ভরসা।’’ নূপুর হোড় নামে আর এক জন বলেন, ‘‘আমার ছেলের বিয়ে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। এখন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে কার্ড পাঠানোর জন্য পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। আমাকেও মাংসের দোকানে গিয়ে চিঠি ওজন করাতে হয়। মহাদেবদাই বলে দেন, চিঠিতে কত টাকার টিকিট লাগাতে হবে। পোস্ট অফিসে ওজন মেশিন থাকলে সুবিধা হত।’’
ডাকঘরে ওজন মাপার যন্ত্র না থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সঞ্জয় সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’’