অন্যদের সঙ্গেই চিকিৎসা ডেঙ্গি আক্রান্তদের। মালদহে। নিজস্ব চিত্র
মেঝেতে পাতা রয়েছে তোশক। তার উপর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে জ্বরে কাতরাচ্ছেন এক রোগী। তাঁর পায়ের নীচে আরও এক রোগী শুয়ে রয়েছেন তোশকের উপরে। তাঁদের মাথার উপরেই শয্যায় মশারির ভিতরে রয়েছেন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এক রোগী। ভাইরাল জ্বর, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীদের একসঙ্গে রেখে এ ভাবে চিকিৎসা চলছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে। এমন অবস্থা মহিলা বিভাগেও বলে দাবি রোগীর পরিজনদের।
সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই ডেঙ্গি আক্রান্তদের রেখে চিকিৎসায় উদ্বেগে রোগীর আত্মীয় ও চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ডেঙ্গি আক্রান্তদের মশারির ভিতরে রাখা হলেও অন্য রোগীদের মধ্যে তা ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ডেঙ্গি আক্রান্তদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে পৃথক ওয়ার্ড চালু করা। যদিও পৃথক ওয়ার্ড খোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, “জ্বরের রোগী শতাধিক ভর্তি রয়েছেন। কিছু রোগী ডেঙ্গিতেও আক্রান্ত রয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। মশারির মধ্যে রোগীদের রাখা হয়েছে। রোগীদের নিয়ম করে দু’বেলা রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে।” পৃথক ওয়ার্ড খোলার বিষযটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এবারে ঘটেনি বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। যদিও ডেঙ্গিতে আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে জেলায়। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দৈনিক বাড়ছে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গির সংখ্যা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে জেলায়। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন শতাধিক রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। বহির্বিভাগে গড়ে একশো করে রোগী জ্বর নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “শুক্রবার ৬২ জন, বৃহস্পতিবার ৮৭ জন রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। শনিবারও কিছু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ২৩জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। এই রোগীরা কালিয়াচক, মোথাবাড়ি, পুরাতন মালদহ, হবিবপুরের বাসিন্দা।” যা যথেষ্ট উদ্বেগের হয়ে উঠেছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। তাঁদের দাবি, শীত জাঁকিয়ে পড়লেই ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করবে। তবে এই সময়টি বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। তাই শহর থেকে গ্রাম। সর্বত্রই প্রচার চালানো হচ্ছে।”
তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, ডেঙ্গি আক্রান্তদের সঙ্গেই সাধারণ রোগীদের ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। অথচ, হাসপাতালে মশার উপদ্রব রয়েছে। মশার উপদ্রব ঠেকাতে ব্লিচিং পাউডার, কীটনাশক তেল স্প্রে করাও হচ্ছে না।” এই বিষয়টি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পার্থপ্রতিম।