ভোটের জন্য বাস তুলে নেওয়ায় বিপাকে যাত্রীরা

বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দুই রাজ্য প্রশাসন বাস তুলে নেওয়ায় উত্তরবঙ্গে অসম-মেঘালয় রুটে যাতায়াতের দুর্ভোগ বাড়বার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকার ভিত্তিতে ইতি মধ্যে উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ১৭৫টি বাস তুলে নিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৬
Share:

বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দুই রাজ্য প্রশাসন বাস তুলে নেওয়ায় উত্তরবঙ্গে অসম-মেঘালয় রুটে যাতায়াতের দুর্ভোগ বাড়বার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকার ভিত্তিতে ইতি মধ্যে উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ১৭৫টি বাস তুলে নিয়েছে প্রশাসন। আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের যাতায়াতের জন্য ওই বিপুল সংখ্যক বাস কাজে লাগান হচ্ছে। নিগমের কোচবিহার ছাড়াও শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ ও বহরমপুর ডিভিসন এলাকা থেকে ওই সব বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

যাত্রীদের অভিযোগ, নিগমের বাস তুলে নেওয়ার প্রভাব ইতিমধ্যে যাত্রী পরিষেবায় পড়তে শুরু করেছে। কোচবিহার-কলকাতা রুটে দু’টি দূরপাল্লার বাসের মধ্যে একটি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোচবিহার-রানাঘাট বাস সপ্তাহে ছয় দিনের বদলে তিন দিন যাতায়াত করছে। দিনহাটা-রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, চৌধুরীহাটের মত রুটেও পরিষেবা বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। সবথেকে বেশি সমস্যা তৈরি হয়েছে কোচবিহার-শিলিগুড়ি রুটে। ওই রুটে কুড়ি মিনিট অন্তর বাস পরিষেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দৈনিক ৩২টি বাসের বদলে মাত্র ১৯টি বাস রুটে যাতায়াত করছে। দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “বিভিন্ন রুটে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে। অসমগামী বাস পরিষেবা ব্যাহত হলে ওই ভোগান্তি আরও বাড়বে। নিগমের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, বিভিন্ন ডিপোয় থাকা অতিরিক্ত বাস নামিয়ে পরিষেবা যথা সাধ্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কোনও রুট যাতে বন্ধ না হয়, তা দেখা হচ্ছে। এ দিকে, আজ শনিবার অসমের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাংলা-অসম-মেঘালয় রুটে যাতায়াতকারী ৪৫টি বাস তুলে নিচ্ছেন সেখানকার জেলা প্রশাসন।

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সুবলচন্দ্র রায় অবশ্য বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে নিগমের বাসগুলি দেওয়া হয়েছে। তবে বিকল্প বন্দোবস্ত করে আমরা যতটা সম্ভব পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।” ইন্টার স্টেট, ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশিনের সম্পাদক নান্টু দে সরকার বলেন, “নির্বাচনের কাজের জন্য অসম প্রশাসনের হাতে আন্তঃরাজ্য রুটে যাতায়াতকারী ৪৫টি বাস দিতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে যাত্রী পরিষেবা সাময়িক ভাবে খানিকটা ব্যাহত হবে।”

Advertisement

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় নিগমের যাত্রী পরিষেবা রয়েছে। দৈনিক গড়ে ছয় শতাধিক বাস শতাধিক রুটে যাতায়াত করে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে পরিবহণ দফতরের কাছে চার শতাধিক বাস দরকার বলে জানান হয়। সরকার অধিগৃহীত বিভিন্ন সংস্থা থেকে ওই বাস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্তাদের কাছে ১৭৫টি বাস পাঠানোর নির্দেশ দেয় পরিবহণ দফতর। রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানের যাতায়াতের জন্য ওই বাসগুলি কাজে লাগানোর কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই ২৮ মার্চ ১৭৫টি বাস প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। নিগমের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কোচবিহার ডিভিসন থেকে ৪৮টি, শিলিগুড়ি ডিভিসন থেকে ৪৬টি, রায়গঞ্জ ডিভিসন থেকে ৫১টি ও বহরমপুর ডিভিসন থেকে ৩০টি বাস পাঠানো হয়েছে। ফলে ওই সব এলাকার বিভিন্ন রুটে পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

একই ভাবে ১১ এপ্রিল অসমের কয়েকটি জেলায় বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ধুবুরি, বরপেটা, গোয়ালপাড়া জেলা প্রশাসন বাংলা, অসম, মেঘালয় রুটে যাতায়াতকারী ৪৫টি বাস তুলে নিচ্ছে। আজ শনিবার সকালের মধ্যে সমস্ত বাস ওই সব জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। আন্তঃরাজ্য, আন্তঃজেলা বাস মালিক সংগঠনের কর্তারা জানিয়েছেন, কোচবিহার থেকে ধুবুরি রুটে দৈনিক গড়ে ৩০টি বাস যাতায়াত করে।

তার মধ্যে ২০টি বাস অসম নির্বাচনের জন্য নিচ্ছে। অন্য দিকে, কোচবিহার থেকে গুয়াহাটি, বঙ্গাইগাঁও, শিলাপাথর ও মেঘালয়ের শিলং রুটে দৈনিক যাতায়াতকারী ৩০টি বাসের মধ্যে ২৫টি বাসই তুলে নেওয়া হচ্ছে। ১২ এপ্রিল সকালে ভোটের কাজে নেওয়া বাসগুলিকে ‘রিলিজ’ করা হবে।

তবে নির্বাচনের কাজের ধকল সামলে চালকদের অনেকের পক্ষেই ১৩ এপ্রিলের আগে স্বাভাবিক রুটে ফের যাত্রী পরিষেবা স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না এমন আশঙ্কা যথেষ্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement