পুরভোটের তরজায় বহুতলও

কোচবিহার শহরে ভূমিকম্পের ঘটনা গত তিন বছরে একাধিক বার হয়েছে। বড় ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য হয়নি।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৫
Share:

ভূমিকম্পপ্রবণ কোচবিহারে বহুতল তৈরির প্রবণতা নিয়ে এ বার পুরভোটের মুখে চাপানউতোর শুরু হল। শনিবার সন্ধেয় ভূমিকম্পের জেরে আলোচনা শুরু হয়েছে শহরের রাজনৈতিক মহলে। অভিযোগ, বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে সমস্ত পদ্ধতিগত নিয়ম মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃত্ব ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করছেন। ‘রাজার শহরে’ প্রাক পুরভোটে জমে উঠেছে তরজা।

Advertisement

কোচবিহার শহরে ভূমিকম্পের ঘটনা গত তিন বছরে একাধিক বার হয়েছে। বড় ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য হয়নি। তবে কোচবিহার ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা ‘জোন ফাইভের’ আওতায় রয়েছে। বিরোধীদের দাবি, একটা সময় ছিল যখন শহরে ‘ রাজবাড়ি’র চেয়ে অধিক উচ্চতার কোনও বাড়ি তৈরির অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হত না। অভিযোগ, সে সব মেনে চলার পাট চুকে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে বেড়েছে বহুতল। অনেকক্ষেত্রেই ঠিকঠাক পদ্ধতি মেনে কাজ হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সংশয় বেড়েছে। অথচ কড়াকড়ি, বাড়তি সতর্কতা নিয়ে বাস্তবে তেমন পদক্ষেপও নেই।

কোচবিহার পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “আশির দশক পর্যন্ত বামপন্থীরা পুরবোর্ডে ক্ষমতাসীন থাকাকালীন সময়ে দোতলা রাজবাড়ির চেয়ে অধিক উচ্চতার বাড়ি, বহুতলের অনুমতি দেওয়া হত না। সেই শহরে যথেচ্ছ ভাবে বহুতল হচ্ছে। তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে দেখভাল ছাড়াও ওই কাজ হচ্ছে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার জন্য যা বিপজ্জনক হতে পারে। অথচ পুর কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই। এ দিকে, মুখে নানা কথা বলা হয়।”

Advertisement

বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে কোচবিহার শহরের অবস্থান এমনিতেই চিন্তার। সেখানে পুরসভা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। অনেকক্ষেত্রে নকশা তৈরি, মাটি পরীক্ষার পদ্ধতিগত ব্যাপারেও নানা প্রশ্ন থাকছে। পুরো কাজের তদারকিও বহু ক্ষেত্রে যে ভাবে হচ্ছে তা যথার্থ নয়। এতেই চিন্তা আরও বাড়ছে।”

তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার পুরবোর্ডের কর্তারা অবশ্য সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিচ্ছেন। কোচবিহারের তৃণমূল পুরপ্রধান ভূষণ সিংহ বলেন, “সতর্কতার ব্যাপারে কোনও খামতি রাখা হয় না। নিয়ম মেনে নকশা, মাটি পরীক্ষার শংসাপত্র যাচাই থেকে যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখে বহুতলের অনুমোদন দেওয়া হয়। দেখা হয় বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র, দমকলের শংসাপত্রও। ফলে অহেতুক অপপ্রচার করে লাভ হবে না। বিরোধীরা নিজেদের নানা ব্যর্থতা আড়াল করতে এ সব অপপ্রচার করছেন।”

ভূষণের কটাক্ষ, “রাজার আমলে হাতি, ঘোড়ায় যাতায়াতের প্রবণতা ছিল। যাঁরা এ সব যুক্তি দিচ্ছেন তাঁরা তা হলে কেন যানবাহন ব্যবহার করছেন।” বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, ‘‘চাপানউতোর কাম্য নয়। সুনির্দিষ্ট নিয়মবিধি দরকার।’’

কোচবিহার হেরিটেজ কমিটির সদস্য দেবব্রত চাকি বলেন, “যে ভাবে ভূমিকম্প হচ্ছে তাতে বহুতল নিয়ে সতর্ক হওয়া দরকার। কমিটির বিগত বৈঠকেও এই বিষয়টি আমি তুলে ধরেছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement