উত্তরবঙ্গে বাণিজ্য ও পর্যটন সম্মেলন। ছবি স্বরূপ সরকার।
উত্তরবঙ্গে আগামী তিন বছরের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ-প্রস্তাব এসেছে বলে শিলিগুড়ির বাণিজ্য সম্মেলন থেকে দাবি করল রাজ্য সরকার। উত্তরবঙ্গকে ঘিরে বিমান, সড়ক, গ্যাসের মতো একাধিক পরিকাঠামোগত প্রকল্পের অগ্রগতির কথাও জানানো হল। বৃহস্পতিবার কাওয়াখালির বিশ্ববাংলা শিল্পী হাটের মঞ্চে টানা কয়েক ঘণ্টার বাণিজ্য সম্মেলনের নেতৃত্বে থাকলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ছিলেন রাজ্যের অধিকাংশ দফতরের সচিব থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের আট জেলার জেলাশাসক-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। সরকারি ঘোষণা শুনে বিজেপির সাংসদ রাজু বিস্তা দাবি করেছেন, মূলত, কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঘিরে রাজ্যের যাবতীয় উদ্যোগের ঘোষণা। রাজ্যের নিজস্ব শিল্পোদ্যোগ নিয়ে কটাক্ষ করেন তিনি।
ঘটনাচক্রে, বিনিয়োগের প্রস্তাব যখন সমতলের শিলিগুড়িতে ঘোষণা হচ্ছে, তখন জেলার কার্শিয়াং পাহাড়ের একটি চা বাগানে উপস্থিত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গের চেহারা পাল্টাতে শুরু করেছে। আগে এখানে কী হবে, ভাবা হত! এখন সব প্রকল্পের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। তিন বছরের মধ্যে এখানে ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে চলেছে। একাধিক প্রকল্পের পরিকাঠামোগত কাজও চলছে।’’ যা শুনে বিজেপির অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র তথা সাংসদ রাজু বিস্তা দিল্লি থেকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘এই সরকারের আমলাদের একাংশ দিনরাত মিথ্যা বলে চলেছেন। রাজ্যের ব্যর্থতা ঢাকতে এঁরা ব্যস্ত। হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আর কর্ম সংস্থানের কথা বলা হয়। যার কটা বাস্তবে হয়, দেখা দরকার।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প কেন্দ্রের নাম না বলে চালায়।’’
গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিলিগুড়িতে শেষ বার শিল্প সম্মলেন হয়। বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের আগে, অক্টোবরে তা করার কথা থাকলেও, হড়পা বানের জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। সম্মেলনে মুখ্যসচিব জানান, বাগডোগরা বিমান বন্দরের জন্য ১০০ একরের বেশি জমি বরাদ্দ। হাসিমারার বিমানবন্দরের জমি ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’-কে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কোচবিহার, মালদহ বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের আলোচনা চলছে। শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার হয়ে গুয়াহাটি এক্সপ্রেস হাইওয়ের জন্য জলপাইগুড়ি ছাড়া, অন্যত্র জমি-জট কেটে গিয়েছে। উত্তর প্রদেশের বারাউনি থেকে অসমের গুয়াহাটি পর্যন্ত ১৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইনের জমি অধিগ্রহণের সমস্যা মিটেছে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ বা দার্জিলিং জেলার মতো জেলায় সিটি গ্যাস প্রকল্প চালুর কাজও শুরু হবে। পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড় থেকে কোচবিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ‘নর্থবেঙ্গল করিডর’, উত্তরে সাতটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, একটি টেক্সটাইল পার্ক, ছ’টি চা পর্যটন প্রকল্পের কথা বলা হয়। বিস্তার মন্তব্য, ‘‘বাগডোগরা বিমানবন্দরের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা, শিলিগুড়ি-সেবক চার লেনের রাস্তার এক হাজার কোটি টাকা, রেলের ১২ হাজার কোটি টাকা, পাহাড়ের বিকল্প জাতীয় সড়কের ২,৬০০ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। কেন্দ্রই সে সব কাজ করছে।’’ মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘সরকার নীতি তৈরি করে। বাস্তবে কী সমস্যা, কাজের জন্য টাকা চাওয়ার মতো অভিযোগ আসছে কিনা তা সম্মেলন থেকেই জানা যায়।’’