মুখোমুখি: দাঁতালের সামনে বন্দুক উঁচিয়ে বনকর্মী। নিজস্ব চিত্র
একটু আগেই ওই সেগুন বাগানে দেখা গিয়েছিল মস্ত দাঁতাল হাতিটাকে। মাদারিহাটের উত্তর ছেকামারির বাসিন্দারা হইচই শুরু করায় সে পিছু হটে। মনে করা হয়েছিল, হাতিটা জঙ্গলে ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বাগানেই লুকিয়ে ছিল হাতিটা। স্থানীয় বাসিন্দা রথু ওরাওঁ (৫৫) সেগুন বাগানে শৌচকর্ম করতে গেলে বাগানের ভিতর থেকে বার হয়ে তাঁকে আক্রমণ করে সে। রথুকে পিষে দেয় হাতিটি।
সোমবার ভোরের ঘটনা। স্থানীয় সূত্রের খবর, রথুর স্ত্রী-সহ গ্রামের মানুষজন ভিড় করে খেকেও কিছুই করতে পারেননি। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় চলে আসেন বন দফতরের মাদারিহাট রেঞ্জ ও জলদাপাড়া এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের কর্মীরা। ততক্ষণে উত্তর ছেকামারি দাপিয়ে হাতিটি পৌঁছে গিয়েছে মেঘনাথ সাহা নগরে। বন দফতরের কর্মীরা জানান, ‘‘সাধারণত দিনের আলো ফুরিয়ে আসার পরই হাতিদের আবার জঙ্গলে ফেরানো হয়। কিন্তু হাতিটি যে ভাবে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, তাতে করে বড় বিপদ হতে পারত। কারণ হাতিকে ঘিরে প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছিল। তাই দ্রুত হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বনকর্মীরা।
স্থানীয়দের কথায়, কিন্তু বনকর্মীরা চাইলেও হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরানো সহজ হয়নি। প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। এরই মধ্যে এক সময় হইচই শুনে বনকর্মীদের দিকেই ছুটে চলে আসে হাতিটি। উপায়ন্তর না দেখে শূন্যে দুই রাউন্ড ছররা গুলি ছোড়েন বনকর্মীরা। পরে এক বনকর্মী বলেন, ‘‘চাকরিতে যোগ দেওয়ার দিনই জানতাম, কাজে জীবনের ঝুকি রয়েছে। বাড়ির লোকেদেরও সেটাই বোঝাই। কিন্তু এদিন ছররা গুলিটা শূন্যে না ছুড়লে আর বাড়ি ফিরে যেতে হত না। যে ভাবে হাতিটা রাস্তা বদলে হঠাৎ তেড়ে এসেছিল, তাতে চমকেই গিয়েছিলাম সকলে।’’ ওই বনকর্মীর কথায়, ‘‘বহুবার বন্য জন্তুদের জঙ্গলে ফেরাতে এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু এ দিন যেন সব পরিস্থিতিই অন্যরকম ছিল।’’
ভিড় আর হট্টগোলে হাতিটি খেপে যায়— বলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুজিত দাস। জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘আত্মরক্ষা করতে বাধ্য হয়েই তখন শূন্যে দুই রাউন্ড ছররা গুলি চালিয়েছেন কর্মীরা।’’ সূত্রের খবর, এর পরই হাতিটি জঙ্গলে ফিরে যায়। ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেশ বসু বলেন, ‘‘জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় মানুষের বাস বেড়েছে। ফলে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংঘাতও বেড়েছে। কিন্তু বনকর্মীদের সংখ্যা সে অর্থে বাড়েনি। এ দিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন।’’ রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বনকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।’’