মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবারই কোচবিহারের চাঁদমারিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই অশান্ত সেই জেলার দিনহাটা এলাকা। মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ দিনহাটার গীতালদহের জারি ধরলা এলাকায় চলল গুলি। এই ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আরও ৪ জন। শাসকদলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের কর্মীদের উপর গুলি চালিয়েছে। যদিও শাসকদলের আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির।
মঙ্গলবার সকালে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের জন্য জলপাইগুড়ি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কোচবিহারের ঘটনা প্রসঙ্গে সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সকালে শুনেছি কোচবিহারে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে এসে গুলি চালিয়ে এক জনকে মেরে দিয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, অশান্তির খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দিনহাটা থানার পুলিশ। মৃতদেহটি উদ্ধার করার পর আহতদের জখম অবস্থায় দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে গুলিবিদ্ধ ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার কারণে তাঁদের কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়।
এই প্রসঙ্গে গিতালদহ ২ এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আনারুল হক বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা প্রচার শেষে ঘরের মধ্যে ঘুমোচ্ছিলেন। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোরবেলা এলাকায় ঢুকে আমাদের প্রায় ছয় কর্মীর উপর হামলা চালায়। গুলি চালানো হয় কর্মীদের লক্ষ্য করে। গুলি চালানোর পাশাপাশি, এক জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারা হয়েছে।’’
দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘ও পার থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বিজেপি। বিজেপির কয়েক জন নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্য এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে দুষ্কৃতীদের এনে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জারি ধরলা এমন এলাকা যেখানে বিএসএফের নজর ছাড়া কিছু হওয়া সম্ভব নয়। তার পরেও এই ধরনের আক্রমণ হল। বাংলাদেশ সীমান্তের একেবারে কাছে এ রকম ঘটনা ঘটল। বিএসএফ কী করছিল?’’
যদিও শাসক তৃণমূলের আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে পদ্মশিবির। বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘দিনহাটার গীতালদহে জারি ধরলা এলাকা সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। যেখানে প্রতিনিয়ত চোরাচালানের কারবার চলে। ওই জায়গায় আমাদের সংগঠন একেবারে নেই বললেই চলে। বর্তমানে কয়েক জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। বরাবরই ওই এলাকায় তৃণমূলের সংঘর্ষ লেগেই থাকে। খুনের পিছনে হয়তa কোনও চোরাচালান কারবারের যোগ থাকতে পারে বা এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল হতে পারে।’’
গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসপি সনিরাজ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে গীতালদহের জারি ধরলা এলাকায় স্থানীয় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি চালানোর খবর আসে। প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যার মধ্যে বাবু হক নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই পুলিশ ওই এলাকায় পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। এই জায়গাটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের সবচেয়ে কাছাকাছি স্থানগুলির মধ্যে একটি। যেখানে নৌকা, যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। স্থানীয় নেতারাও বাংলাদেশের অপরাধীদের নিয়ে এসে এই কাণ্ড ঘটাতে পারেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’