দিন তিনেক ধরে বৃদ্ধ দম্পতিরঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নীচে। —নিজস্ব চিত্র।
নবতিপর অশক্ত বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী-র আশ্রয় ছিল দু’কাঠা জমিতে। তবে দিন তিনেক ধরে তাঁদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নীচে। অভিযোগ, মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে চাপ দিয়ে তাঁদের ভিটেমাটি বিক্রি করাতে বাধ্য করিয়েছেন এলাকায় 'তৃণমূল ঘনিষ্ঠ' বলে পরিচিত জমি মাফিয়া নাসিরুদ্দিন। কথা ছিল, দম্পতিকে অন্যত্র কম দামে জমি দেবেন নাসিরুদ্দিন। তবে আগাম টাকা দিয়েও ঘর পাননি তাঁরা। এ নিয়ে থানা-পুলিশেও কাজ হয়নি বলে দাবি দম্পতির। গোটা ঘটনায় মন্তব্য করতে চাননি নাসিরুদ্দিন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে খবর, হরিশ্চন্দ্রপুরের তেঁতুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৯০ বছরের শেখ ভুসরা এবং তাঁর স্ত্রী বেগম বিবির দুই ছেলে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। গ্রামের রাস্তার ধারে দু’কাঠা জমিতে থাকেন এই দম্পতি। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বৃদ্ধ দম্পতির কাছ থেকে তাঁদের জমি-বাড়ি কার্যত কেড়ে নিয়েছেন নাসিরুদ্দিন। রাস্তার ধারে হওয়ায় ওই দু’কাঠা জমির দিকে নজর ছিল তাঁর। কথা ছিল, অন্যত্র অনেক কম দামে একটি জমি দেওয়া হবে দম্পতিকে। সে জন্য নাসিরুদ্দিনকে ১০ হাজার টাকা আগাম দিয়েছিলেন বেগম বিবি। কিন্তু সে জমি দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ওঠাবসা থাকায় এলাকার অনেকেই জমি কারবারি নাসিরুদ্দিনকে সমঝে চলেন। অভিযোগ, বৃদ্ধ দম্পতিকে জোর করে ঘর থেকে বার করে তাঁদের বসতবাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন নাসিরুদ্দিন এবং তাঁর লোকজন।
বয়সের ভারে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না বৃদ্ধ। হাঁটাচলা করতেও অসুবিধা হয় তাঁর। ভিটেমাটি হারিয়ে বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে গত তিন দিন ধরে এলাকার একটি মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তিন দিনে কারও সহায়তা না পেয়ে বাধ্য হয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। দম্পতির দাবি, জমি না পেলে আমৃত্যু এ ভাবেই পড়ে থাকবেন তাঁরা। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, ‘‘দম্পতির অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে তেঁতুলবাড়ির বাসিন্দা তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের মোয়াজ্জেম ইমামের সভাপতি আব্দুল মাতিন বলেন, ‘‘ওই গরিব বৃদ্ধের স্ত্রী বেগম বিবি ১০ হাজার টাকা দিয়ে নাসিরুদ্দিনের কাছে বাড়ি বিক্রি করেন। সে আড়াই মাস আগের ঘটনা। তবে তাঁদের অন্যত্র জমি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে থানা-পুলিশ হয়েছে। টাকার বিনিময়ে দম্পতিকে জমি দেওয়া হোক, এটাই চাই আমরা।’’ নাসিরুদ্দিন তৃণমূল কর্মী বলে দাবি অনেকের। তবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সির দাবি, ‘‘তৃণমূলের কেউ এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করেন না। কেউ যদি এতে জড়িত থাকেন, তবে দলে তাঁর স্থান নেই। ব্লক নেতাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে বৃদ্ধ দম্পতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশকেও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’’