ঘরের পথে: ফিরছেন শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার, রায়গঞ্জের ফরেস্ট মোড়ে। ছবি: চিরঞ্জীব দাস
ভিন্ রাজ্য থেকে জেলায় ফিরে এলে গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছেন না বাসিন্দারা। আর তাই তীব্র সমস্যায় পড়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন গ্রাম সংলগ্ন মাঠে আশ্রয় নিতে হচ্ছে তাঁদের। পরে অবশ্য খবর পেয়ে প্রশাসনের তরফে তাঁদের বিভিন্ন কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে বলে খবর। কিন্তু ঘরে ফেরার এই ‘ধাক্কায়’ হতাশ শ্রমিকেরা।
তপনের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক সুদর্শন রায়ের বক্তব্য, “১৬ দিন ধরে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরেছি। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা ঢুকতেই দিচ্ছিলেন না। পরে অবশ্য স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করলে ঘরে ঢুকতে পেরেছি।” তাঁর দাবি, ফেরার পথে প্রায় সব জেলাতেই থার্মাল স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাতে তিনি সুস্থ আছেন বলেই সব জায়গা থেকেই জানানো হয়। কিন্তু তার পরেও গ্রামের বাসিন্দাদের সন্দেহ দূর হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে এ ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন শ্রমিকেরা।
এ দিকে, প্রশাসনের পক্ষেও এক সঙ্গে হাজার হাজার শ্রমিকের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে খবর৷ ফলে খিদেয়-পরিশ্রমে ক্লান্ত শ্রমিকেরা হতাশ হয়ে গ্রাম সংলগ্ন মাঠে আশ্রয় নিচ্ছেন। বালুরঘাটের ভূষিলা মাঠেও গত সোমবার বেশ কয়েকজন শ্রমিক আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার অবশ্য তাঁদের তুলে নিয়ে কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখা হয়। কিন্তু কয়েক হাজার শ্রমিককে রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই সমস্যাও মেটেনি। তাই বন্ধ থাকা স্কুলগুলিকে কোয়রান্টিন সেন্টার হিসাবে গড়ার দাবি উঠছে।
ইতিমধ্যেই জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের তালা ভেঙে শ্রমিকদের রেখেছেন বাসিন্দারা। সেই ধারা অব্যাহত। কিন্তু তাতে সরকারি অনুমতি না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্টের জন্য মাঠে বা রাস্তায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শ্রমিকদের এই সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এসেছে বালুরঘাটের ‘সমমন’ নামে একটি নাট্যদল। পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার ও ওষুধ দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। এমনকি ওই নাট্যদলের তরফে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে, যে সব শ্রমিকদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, তাদের থাকার ব্যবস্থা প্রশাসন করে দিলে খাবার ও ওষুধের দায়িত্ব তারা নেবে। প্রশাসনিক আধিকারিকরা অবশ্য জানিয়েছেন, পারিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোয়রান্টিন সেন্টার গড়া হয়েছে। সেখানে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা হবে।