প্রতীকী ছবি।
ঝকঝকে আবহাওয়া, দিগন্তে নির্নিমেষ কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং এত দিন ঘরে আটকে থাকা— এই তিনের ঠেলায় এ বারে পর্যটন বাণিজ্যের উত্তুরে পালে হাওয়া লাগতে চলেছে।
পর্যটন দফতর ও সংগঠনগুলি বলছে, আসন্ন বড়দিন ও নতুন বছরের মরসুমকে ঘিরে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে ভাল ব্যবসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত বছরের এই মরসুমে কোথাও ঠাঁই ছিল না। এ বারে তেমন ছবি এখনও নেই ঠিকই, কিন্তু অন্তত ৬০ শতাংশ ঘর এর মধ্যেই বুকিং হয়ে গিয়েছে বলে পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি সূত্রে খবর। পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য আরও ভাল খবর, পুজোর সময় কলকাতা, বিহার, অসম বা উত্তরের জেলার পর্যটকেরা ধীরে ধীরে ঘরের বাইরে বার হতে শুরু করেছেন। এ বার এই মরসুমেই প্রথমবার গুজরাত, মহারাষ্ট্র থেকে পর্যটকদের বুকিং ও আসা শুরু হয়েছে। তাই নতুন করে আশার আলো পর্যটন শিল্পে।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘করোনার সঙ্গে লড়াই করেই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। আর মানুষকে বেশি দিন ঘরে আটকে রাখাটাও মুশকিল। আমাদের আশা, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও ভাল হবে।’’ পর্যটন সংগঠন সূত্রের খবর, প্রতি বছর বড়দিনের পর্যটন মরসুম শুরু হয়ে যায় ২০ ডিসেম্বর থেকে। আর চলে নতুন বছরের ৫ জানুয়ারি অবধি। ঠান্ডার পরিবেশে, কোথাও কোথাও বরফ পরাও শুরু হয়ে যায়। তার মধ্যে শীতের পোশাক পরে পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা আসেন। এ বার করোনার জন্য সব কিছুই পাল্টে গিয়েছে। বিদেশিরা নেই। সেখানে স্থানীয় পর্যটক দিয়ে শুরু হয়েছে মরসুম। এ বারে ভিন্ রাজ্যের পর্যটকেরা আসা শুরু করলে ব্যবসা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
সরকারি সূত্র এবং সংগঠনগুলির হিসেবে, এই মরসুমে গত বছর অবধিও কমবেশি রোজ ২৫-৩০ কোটি টাকার ব্যবসা হত। হোটেল, রিসর্ট, হোম-স্টে, লজের সঙ্গে পরিবহণ, রেস্তরাঁ মিলিয়ে এমনই পরিমাণ লেনদেন হত। গত মার্চ মাস থেকে পুজোর আগে অবধি যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে কোটি টাকা তো দূরের কথা, ব্যবসা বা সংস্থার ঝাঁপ না বন্ধ হয়ে যায়, তা নিয়েই ভাবছিলেন ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিটা আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে। বড়দিনের মরসুমে ১৫-১৬ কোটি টাকা রোজ উত্তরের এই অঞ্চলে আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘শীতের দার্জিলিং বা কালিম্পং আর সঙ্গে বড়দিন, নতুন বছর বরাবর পর্যটকদের টানে। করোনার জন্য চাপা উত্তেজনা ছিল। কী হবে বোঝা যাচ্ছিল না। তবে এখনও অবধি যা বুকিং হয়েছে, তাতে পরিস্থিতি ভালই বলা চলে।’’ পর্যটন সংগঠনগুলি জানাচ্ছেন, সবচেয়ে বেশি বুকিং হয়েছে দার্জিলিং শহরে। মোর্চার দুই গোষ্ঠীর টানাপড়েনের মধ্যেও পর্যটকেরা পাহাড়মুখো। সেই সঙ্গে কালিম্পং বা পাহাড়ি হোম-স্টেগুলিতে ভিড় ভালই। দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিনোদ খন্না বলেন, ‘‘নতুন বছর অবধি ভালই বুকিং রয়েছে। পাহাড় শান্ত, বন্ধ শূন্য থাকুক। তা হলে সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।’’
স্যানিটাইজ়েশন, সুরক্ষা, সচেতনতার খোঁজ নিয়ে পর্যটকেরা আসছেন। এর পরেই চাহিদা বেশি ডুয়ার্সের। শেষে রয়েছে সিকিম। তবে ট্রেন কম থাকায় ডুয়ার্সে কিছুটা টান রয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, করোনার পর থেকে বহু পর্যটক গাড়ি নিয়ে আসছেন। প্রথমে উত্তরবঙ্গের নানা জেলা, বিহারের লোকজন এই অঞ্চলে আসা শুরু করেন। এ বার তাঁরাও বেশিরভাগ ডুয়ার্সমুখী।