—প্রতীকী চিত্র।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের ধাবায় গুলি করে পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যার স্বামী বাপি রায়কে খুনের ঘটনার পিছনে একাধিক অবৈধ কারবারে যুক্ত চক্র কাজ করছে বলে অনুমান পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, বাপিকে গুলি করার পিছনে নানা অবৈধ কারবার, পাওনা নিয়ে গোলমালের যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইসলামপুর পুলিশ-জেলার সুপার জবি টমাস বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।’’
খুনের ঘটনায় ধৃত শিলিগুড়ির বিধাননগরের বাসিন্দা অনিকেত চক্রবর্তী (অনিকেত সরকার বলে পরিচয় দিত) এলাকায় তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত। তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের ‘ডান হাত’ হিসেবে এলাকার বাসিন্দারা চেনেন বছর ত্রিশের অনিকেতকে।
অনিকেতকে কেন ধরল পুলিশ? স্থানীয় সূত্রের খবর, অনিকেতের বাবা ট্রাকের চালক ছিলেন। অতীতে তাঁর সঙ্গে ট্রাকের খালাসির কাজ করতেন বাপি। থাকতেন বিধাননগরেই। পারিবারিক পরিচয়ের সূত্র ধরেই অনিকেত এবং বাপির ‘ঘনিষ্ঠতা’। সেখান থেকে বাপি নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি কী ভাবে বাড়িয়েছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সোমবার রাতে পুলিশ অনিকেত-সহ চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাকি তিন জনকে ছেড়ে দিলেও, অনিকেতকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি বাপির সঙ্গে অনিকেতের কী নিয়ে বিবাদ চলছিল, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে কি না, পুলিশ জানতে চাওয়ায়, অনিকেত অস্বীকার করেন। থানায় আসার আগে অনিকেত মোবাইল থেকে ওই নেতাকে ফোন করেছেন বলে দাবি পুলিশের। ওই নেতার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে পুলিশ।
কেন এই খোঁজখবর? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এলাকায় গরু পাচার, কয়লা পাচার, জাল মদ বিক্রি এবং জমির অবৈধ কারবারে জড়িত চক্র এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের চাপে এলাকায় জাল মদের কারবার কিছুটা থিতিয়ে গেলেও, অন্য চক্রগুলি সক্রিয় রয়েছে। অনিকেত, ওই তৃণমূল নেতা এবং নিহত বাপির সঙ্গে কোনও ভাবে এই চক্রগুলির ‘যোগাযোগ’ ছিল বলে ধারণা তদন্তকারীদের। জাল মদ পাচারের অভিযোগ ধরা পড়ে, কয়েক মাস জেল খেটেছিলেন বাপি। জড়িত ছিলেন জমির কারবারে। অনিকেতও জমির কারবারে ছিলেন।
অনিকেতের বাবা, মা প্রয়াত। যুবক বিয়ে করেননি। বিধাননগরে তাঁর পাশের বাড়িতে থাকেন মামা শ্যামল সরকার। মামার পরিবারের পরিচিতিতে অনিকেত নিজের পদবি সরকার বলতেন। শ্যামল বলেন, ‘‘অতীতে বাপি অনিকেতের বাবার সঙ্গে ট্রাকের খালাসির কাজ করত। তখন এখানেই থাকত। পরে, টাকা হওয়ায় এখান থেকে বাপি চলে যায়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অবৈধ কোনও কারবার করে অনিকেত মোটা টাকা কামিয়েছে বলে মনে করি না। ওর বাড়ির পরিস্থিতি এমন যে বর্ষায় টিন থেকে জল পড়ে। আমাদের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে। কাজ করে গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় এক নেতার কাছে। বাপিকে গুলি করার ব্যাপারে ও জড়িত বলেও মনে করি না।’’ তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা (সমতল) সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘অনিকেত তৃণমূলের কোনও নেতা নয়। সকলেই বলে তৃণমূল করে। যে-ই হোক, কারও দোষ, অন্যায়ের দায় দল নেবে না।’’