খাবারের দাবিতে: বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। বুধবার। ছবি: স্বরূপ সরকার
চরম অচলাবস্থা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। খাবার খরচ দিতে না পারায় রামকৃষ্ণ হস্টেলের মেস বুধবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে, আন্দোলনে পড়ুয়ারা। কোনও বিভাগ এ দিন খোলা যায়নি। বাতিল হয় সেমিনারও। জয়েন্ট রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত, বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সুভাষচন্দ্র রায় পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি নিবাসে জয়েন্ট রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের ডিন, আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। পরে, জয়েন্ট রেজিস্ট্রারের দফতর খুলে সেখান থেকে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং উচ্চ শিক্ষা দফতরের সচিবদের ই-মেলে সমস্যার কথা জানানো হয়। জয়েন্ট রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘সমস্যার কথা আচার্য এবং উচ্চ শিক্ষা দফতরে জানানো হয়েছে। কী পদক্ষেপ করা হবে, সে অপেক্ষায় রয়েছি।’’
পড়ুয়াদের অভিযোগ, এ দিন একটি হস্টেলে খাবার বন্ধ হয়েছে। কয়েক দিনে বাকি হস্টেলেও একই পরিস্থিতি হবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। উপাচার্য না থাকায় ফিনান্স অফিসার এবং মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় রেজিস্ট্রার পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে, আগামী মাস থেকে শিক্ষক-কর্মী-আধিকারিকদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। কেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে মাসের ১ তারিখ ফিনান্স অফিসার এবং ডেপুটি ফিনান্স অফিসার চেকে সই করলে, তবে সকলের বেতন হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ফিনান্স অফিসার অবসর নেওয়ায় সমস্ত আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। সমস্যা নিয়ে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতিও সরব হয়েছে। সমিতির সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উচ্চ শিক্ষা দফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, উপাচার্য না থাকায় কী-কী সমস্যা হচ্ছে। এটি হাস্যকর। কর্তৃপক্ষ তা জানিয়েছেন। কোনও লাভ হয়নি।’’ অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী সংগঠনও এ দিন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে। তাদের অভিযোগ, ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল দেওয়া হয়নি। তাদের আশঙ্কা, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হলে বড় সমস্যা তৈরি হবে।
অন্য দিকে, এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা না দেওয়ায় এক মাসের সুদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সকলে। শ্রমদিবস-ভিত্তিক ৫৬ জন অস্থায়ী কর্মীর গত মাসের বেতন হয়নি কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন অস্থায়ী কর্মী অ্যাসোসিয়েশনের নীলকান্ত বিশ্বাস। অভিযোগ,এই আর্থিক বছরে বিভিন্ন দফতরের প্রকল্পের টাকা মার্চের মধ্যে খরচ করতে না পারলে, ফিরে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতি এ দিন পড়ুয়াদের খাবার খরচ চালাতে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। আধিকারিক সংগঠন এবং পঞ্চানন বর্মা অনুরাগী মঞ্চের তরফেও সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এটা সমাধান নয় বলে লাগাতার আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য, উপাচার্য, ফিনান্স অফিসার, রেজিস্ট্রার নিয়োগ না হলে, সমস্যা মিটবে না। আজ, বৃহস্পতিবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজর্কম হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে বিভিন্ন জায়গায় আর্জি জানাতে শিক্ষক সমিতি বৈঠক ডাকলেও, শিক্ষক-শিক্ষিকারা না থাকায় তা করা সম্ভব হয়নি বলে জানান সমিতির সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘উপাচার্য নিয়োগে যত দেরি হবে, সমস্যা বাড়বে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সমিতির সম্পাদক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা থাকলেও তা খরচ করার মতো আধিকারিক নেই। উত্তরবঙ্গের সব চেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের দাবি, এখানকার ডিনদের মধ্যে কাউকে অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্বদেওয়া হোক।’’