উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ
বাজেট বক্তৃতা শোনার পর প্রতিবার যা হয়, এ বারও ব্যতিক্রম হল না। অন্তত স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের প্রশ্নে উত্তরবঙ্গের আশার ফানুসটা চুপসে গেল। এমসের ধাঁচে হাসপাতালের স্বপ্ন বা উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার পরিকাঠামো এই এলাকায় গড়ে ওঠার দাবি দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রের বাজেট এলেই সেই প্রত্যাশা বেড়ে যায়।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের শিলিগুড়ি শাখার সহ-সভাপতি অভিষেক বিশ্বাসের কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গ চিকিৎসা ক্ষেত্রে বরাবরই বঞ্চিত। যে মানের হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ ইতিমধ্যে হয়েছে, সেই স্তরের মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি মেটানো যাবে না। কেন না এ সব ক্ষেত্রে নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিও থোরাসিক সার্জারির মতো চিকিৎসা পরিষেবা নেই। নিউরো সার্জারির তো খুবই দরকার। তাই যে পরিকাঠামো রয়েছে, সেটাকেই ব্যবহার করে যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারত, তা হলে অনেক উপকার হত।’’
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও উত্তরবঙ্গে আরও তিনটি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। একটি মালদহে, অন্য দু’টি কোচবিহার এবং রায়গঞ্জে। তবে কোচবিহার থেকে মালদহ— কোথাও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা না মেলায় বাধ্য হয়ে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে প্রচুর মানুষকে ছুটতে হয়। গত বছর থেকে চালু হওয়া রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রাজ্য এবং কেন্দ্রের সুসম্পর্ক ছাড়া এ ধরনের মেডিক্যাল কলেজ বা উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। রাজ্যের পক্ষে প্রত্যন্ত এলাকার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘স্পেশ্যালাইজ়ড ট্রিটমেন্ট’, যেমন নিউরো, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির মতো ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবু কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সরকার সেটা করেছে। আরও কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে। অভাব রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও।’’
বিজেপির উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রথীন বসু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি চালায় একমাত্র এমস হাসপাতাল। অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কেন্দ্র আর্থিক সহায়তা দেয়। রাজ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালায়। এ রাজ্যে সেটা ভেঙে পড়েছে।’’ তৃণমূল নেতা রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে একাধিক মেডিক্যাল কলেজ চালু করেছে রাজ্য। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে রাজনীতি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু আমরাই ওটা চালু করব।’’ কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার রাজীব প্রসাদ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য খাতে আরও বাজেট বাড়িয়ে উত্তরবঙ্গে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।’’ তাঁর মতে, আয়ুষ্মানের আগে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো জরুরি, যাতে চিকিৎসা পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছয়।