কনককান্তি বাগচি।
দীর্ঘদিন ধরেই ফলিত অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছি। আমি নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুয়োর ইকনমিক্স’ বইটিও পড়েছি। আমাদের উত্তরবঙ্গে যাঁরা ফলিত অথর্নীতি নিয়ে কাজ করেন, অভিজিৎবাবুর মূল গবেষণার কাজও তাঁদের সঙ্গে অনেকটাই মেলে। বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে বস্তিবাসীদের জীবন, তাদের স্বাস্থ্য, আয়ের মূল্যায়নে দারিদ্রের কারণ— ওই খোঁজার চেষ্টা করেছেন অভিজিৎবাবু। সেগুলিকে তাঁর গবেষণার বিভিন্ন ছত্রে সাজিয়েছেন। তাত্ত্বিক গবেষণায় আটকে না থেকে মাঠে নেমে যে কাজ করেছেন, তাতে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে হয় বৈকি।
ফলিত অর্থনীতি নিয়ে উত্তরবঙ্গেও অনেক কাজ হচ্ছে। অভিজিৎবাবুর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে সেই গবেষণাগুলিও নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাবে। আরও একজন বাঙালি অর্থনীতিবিদের নোবেল পাওয়া এখানকার সেই গবেষণাগুলিকে আরও উৎসাহিত করবে বলে আমার মনে হয়। কারণ উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন সরকারি নীতি বিফলে যাচ্ছে। কেন সেই সব নীতি বিফলে যাচ্ছে, তা নিয়ে অনেক জায়গাতেই ভাবনাচিন্তা চলছে। কী ভাবে সেই ভুল নীতি শোধরানো সম্ভব, তা-ও তিনি তাঁর মূল গবেষণায় লিখেছেন। আমাদের এখানেও একই রকমের কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন রেফার্ড জার্নালে সেগুলি প্রকাশিতও হচ্ছে।
আমি এবং আমার অন্য সহকর্মীরা একই রকম ভাবে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দারিদ্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করি। সরকারি নীতিগুলি আমাদের দেশেও অনেক জায়গায় কাজে লাগছে না। প্রান্তিক মানুষগুলির অবস্থা বদলানো যাচ্ছে না। গরিবি থেকে উত্তরণ সম্ভব হচ্ছে না।
সেই সব সরকারি নীতির সমালোচনা এ রকম নির্ভেজাল গবেষণার কাজের মধ্যে দিয়েই ভাল ভাবে করা সম্ভব। অভিজিৎবাবুও এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দারিদ্র প্রভাবিত এলাকায় গিয়ে ঘুরে তাঁর গবেষণার কাজ করেছেন। তা রীতিমতো প্রশংসার। ফলিত অর্থনীতির গবেষণা আরও বেশি করে হওয়া প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। আমার মনে পড়ে, অভিজিৎবাবুর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনিও একবার আমাদের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে এসেছিলেন। সেই সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল।
অভিজিৎবাবুর নোবেল পাওয়ার খবরে আমরা অত্যন্ত খুশি। তাঁর সঙ্গেও সাক্ষাতের অপেক্ষায় রইলাম।
(সিনিয়র প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়)