মাইকে বাজছে ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা।’ নকশালবাড়ি আন্দোলনের সুর্বণজয়ন্তী উদ্যাপনের মিছিল পৌঁছল শিলিগুড়ি বাঘা যতীন পার্কের মঞ্চে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই মঞ্চে প্রথমে কিছুক্ষণ গণসঙ্গীত বাজার পরে শুরু হয় ‘স্বদেশ’ পর্যায়ের একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত।
নকশালবাড়িতে কৃষক আন্দোলনের প্রভাবে সত্তরের দশকে যখন উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্য, ‘বুর্জোয়া কবি’ রবীন্দ্রনাথের একাধিক মূর্তি ভাঙা হয় সে সময়ে। সেই আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে নকশালপন্থীদের সভাতেই ফিরে এলেন রবীন্দ্রনাথ। গায়ক ইন্দ্রনীল সেন এখন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রীও। তবে এতে আপত্তি দেখছেন না নকশাল নেতারা। সিপিআইএমএল লিবারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এ তো হতেই পারে!’’ আন্দোলনের পাঁচ দশক পরে নকশালবাড়ির চেহারা বদলে গিয়েছে। এ বার কি মনোভাবও বদলাচ্ছে নকশালপন্থীদেরও? প্রশ্ন উস্কে দিল নকশালবাড়ির মঞ্চ।
এই মঞ্চ থেকেই আর এক বার ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের ডাক দিলেন দীপঙ্করবাবুরা। ষাটের দশকের জমি আন্দোলনের স্লোগানে নতুন প্রজন্মের অনেকে যে যৌক্তিকতা খুঁজে না-ও পেতে, সেটা মানেন তিনি। তবে ১৯৬৭ সালের সেই আন্দোলনের মাধ্যমে যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াই শুরু হয়েছিল, তাকেই আবার সামনে এনে নিজেদের জমি ধরে রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন তাঁরা। দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘এখন দেশে-রাজ্যে ফ্যাসিবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে লড়াইও কিন্তু নকশালবাড়ির লড়াই।’’
এ দিন বাঘা যতীন পার্কে প্রকাশ্য সভাও করে লিবারেশন। ভিন রাজ্য তো বটেই, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
নকশালবাড়ির সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপনে এ দিন শিলিগুড়ি মহকুমায় পাঁচটি পৃথক অনুষ্ঠান হয়েছে। লিবারেশনের মিছিলে হাঁটা কর্মী-সমর্থকদের হাতে দেখা গিয়েছে কাস্তে, টাঙ্গিও। নকশালবাড়ি আন্দোলনে সামিল খেমু সিংহও মঞ্চে বক্তৃতা দেন। সত্তর ছুঁইছুঁই খেমুবাবু পরে বলেন, ‘‘সকলের আর্দশই যদি এক হবে, তবে এত গোষ্ঠী কেন থাকবে? সব দলের এক হওয়ার সময় এসেছে।’’
সংগঠন আগের মতো নেই, কমেছে আন্দোলনের ধার-ভারও। সভায় বক্তৃতায় বামপন্থী সব দলকে এক হওয়ার ডাক দিলেন দীপঙ্করবাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘এটা সময়ের ডাক। সব বামপন্থী দলকে এটা বুঝতে হবে।’’ নকশালপন্থীদের দাবি, প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতেই এই ডাক শোনা গেল মঞ্চ থেকে।